
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় কালিগঙ্গা নদীর কুস্তা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাটিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করে আসছিল বাবর গং। এলাকাবাসী বিভিন্ন সময় বাঁধা দিলেও বাধা উপেক্ষা করেই চলছিল তাদের বালু তোলা। সর্বশেষ গ্রামবাসীর ধাওয়ায় খনন যন্ত্র সরিয়ে নেয় বাবর বাহিনী। এরপর থেকে বালু ব্যবসায়ীদের ভয়-ভীতিতে আতঙ্কে আছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, বসতি এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বাড়িঘর ও ফসলি জমিসহ বিঘা-বিঘা জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এতে এলাকাবাসী মানববন্ধন ও প্রতিবাদ জানালেও কোন সুফল না পাওয়ায় এলাকাবাসী ধাওয়া দিয়ে তাদের উৎখাত করে।
অভিযুক্ত বাবর (৩৩) সদর উপজেলার আটিগ্রাম ইউনিয়নের মৃত মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে। তার নেতৃত্বে একাধিক ভেকু ও কাটিং মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন চলছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, বাবরের বালু এবং ড্রেজার ব্যবসায় হাতে খড়ি মানিকগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আবুল বাশার এর হাত ধরে। দীর্ঘদের যুগের এই ব্যবসা বাশারের হয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছে বাবর। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বাসারকে ছাড়িয়ে এককভাবে এই অবৈধ খনন যন্ত্র দিয়ে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করে রাজধানী সহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করছেন তিনি। এই ব্যবসা পরিচালনার জন্য তার আছে ডজন খানেক সদস্যের এক বাহিনী।
কুস্তা এলাকার ভুক্তভোগী আলিমুদ্দিন জানান, আমার ছয় বিঘা ফসলি জমি ইতোমধ্যে এই ড্রেজারের কারণে ভেঙে সাবার হয়ে গেছে। এই জমিতে আমি কৃষির আবাদ করতাম। ড্রেজার লাগানোর সময় থেকে অনেকবার তাদের বাধা দিয়েছি তারা আমাদের ভয় ভীতি দেখিয়েছে। ছয় বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে, আমি এখন নিঃস্ব। আমার যে ক্ষতি হয়েছে আমি এই ক্ষতির ক্ষতিপূরণ চাই।
ভুক্তভোগী আবু সাঈদ বলেন, ড্রেজারের কারণে আমার কয়েক বিঘা জমি ভেঙে গিয়েছে। আমার মত অনেকের জমি আছে এই চড়ে। আমরা এলাকাবাসী অনেকবার তাদের এখান থেকে সরে যেতে বলেছি। তারা আমাদের ভয় ভীতি দেখিয়েছে। প্রশাসন আমাদের কোন প্রকার সহযোগিতা করেনি।
ভুক্তভোগী বাসিন্দা নোয়াই, মতিন, নইমুদ্দিন, ওমর, সইদা, হেকমত আলী, শহীদ বলেন, আমাদের বসতবাড়ির পেছনেই দিনরাত মেশিন চলার শব্দে শান্তি নেই। ভয় ছিল, আমাদের সকলের বাড়িই নদীতে চলে যাবে। আমরা বাঁধা দিলে আমাদের গালিগালাজ করে, মারধরের হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে আমরা সকলের সঙ্গবদ্ধ হলে এলাকাবাসীর ধাওয়ায় মেশিন সরিয়ে নিয়েছে বালু ব্যবসায়ী বাবর। কিন্তু এখনো লোকজন মারফত আমাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই; আর চাই এই বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর যেন কেউ আমাদের মত ভিটে মাটি হারানোর আশঙ্কায় না পড়ে।
অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বাবর বলেন, 'ওই কাটিং মেশিনটি আমার নয়। ঘিওরের শ্রীধামনগর এলাকায় যারা সরকারিভাবে ডাক পেয়েছে তারাই ওই মেশিনটি বসিয়েছে।' এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাশিতা-তুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীকে অবৈধ ড্রেজারের বিষয়ে জানানো আছে- যাতে তারা সামাজিকভাবে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করতে পারে। কারণ আমরা নদীর মাঝখানে যেতে যেতেই রোজার সংশ্লিষ্ট লোকজন পালিয়ে যান। এ বিষয়টি আমি জানলাম। পরবর্তীতে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর