বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই চুয়াডাঙ্গায় মশার উপদব্র বাড়তে দেখা দিয়েছে। ময়লা আর্বজনায় ভর্তি ড্রেন গুলাতে মশার উতপত্তি বাড়ছে। ফলে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগী শনাক্ত হচ্ছেন সদর হাসপাতালে। গেল দুই অর্থবছরে মশক নিধন কার্যক্রমের কোন বাজেট নেই পৌরসভার। তবে পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মশক নিধন করার জন্য ড্রেন গুলাতে বিষ স্প্রে অব্যাহত আছে।
পুরনো বাজেটের টাকা দিয়ে চলছে মশক নিধন কার্যক্রম। অন্যদিকে মশকনিধনে নেই প্রশাসন, পৌরসভা কিংবা স্বাস্ব্য বিভাগের দৃশ্যমান কোনো উদ্দ্যোগ। জানাগেছে, চুয়াডাঙ্গায় প্রতিদিনই চোখ রাঙাচ্ছে এসিড মশা। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এডিস মশা ও লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের পানি বদ্ধ ড্রেন, দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করা আর্বজনা যেন মশা জন্মের আঁতুড়ঘর। ফলে সবসময় মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ থাকেন পৌর এলাকার বাসিন্দারা। চলতি বছর বর্ষার শুরুতে মশার উপদ্রব বাড়ায় তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে বহুগুণে।
শহরের সরকারি অফিস আর কর্মকর্তাদের বাসার সামনে মশক নিধনে নিয়মিত স্প্রে ও ড্রেন পরিষ্কার করা হলেও পৌর এলাকার আওতাধীন অন্যান্য এলাকার বাসিন্দারা হয়েছেন বঞ্চিত। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মশক নিধনে কোন বরাদ্দ আসেনি। ফলে পৌরসভা থেকে মশা নিয়ন্ত্রনে নানা ধরনের উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ পৌরবাসী।
তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, বরাদ্দ না থাকা আর লোকবল সংকটে এডিস মশা ও লার্ভা নিধনের কাজ ঢিমেতালে চলছে। তবে দ্রুত নিয়মিত এডিস মশা নিধনে কার্যক্রম শুরু করবেন তারা। তাছাড়া পুরনো বাজেটের টাকা দিয়ে মশক নিধন কার্যক্রম চলমান আছে। কিন্তু তাও মিলছে না পৌরবাসীর সঠিক সেবা। কোন ভাবেই মশার উপদ্রব ঠেকানো যাচ্ছে না। পৌর এলাকার ড্রেন গুলো নিয়মিত পরিস্কার ও সঠিকভাবে মসক নিধনে বিষ স্প্রে করলে মশার উপদ্রব ঠেকানো যাবে বলে মনে করেন পৌরবাসী। অপরদিকে জেলার সদর হাসপাতালে চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
বাসাবাড়ির বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা পানিতে বংশ বিস্তার করছে এডিশ মশা, ছড়াচ্ছে রোগবালাই। এ রোগের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার কথা বলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তবে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগিদের চিকিৎসা নিতে অসুবিধা হচ্ছে না। আছে পর্যাপ্ত ডেঙ্গু রোগিদের জন্য ঔষধ মজুদ। চুয়াডাঙ্গার পৌরবাসী একরামুল হক বলেন, চারদিকে ময়লা আর্বজনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আবার পৌর এলাকার ড্রেন গুলাতেই অনেক নোংড়া। তাই মশার উত্তাপ বেশি। এই মশা নিধন কার্যক্রম দ্রুত করতে হবে। আবার মশার উপদ্রব ঠেকাতে হলে চারপাশে পরিস্কার রাখার দাবি জানাছি পৌর কর্তৃপক্ষকে।
দামুড়হুদা উপজেলা কাজিপুর গ্রাম থেকে সদর হাসপাতালে আসা নাম না প্রকাশ শর্তে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী বলেন, হঠাৎ করে গায়ে ব্যাথা শুরু হয়। এরপর জ¦র তীব্র হয়। তারপর প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়ার পরও সুস্থ হয় না। তারপর না পেরে সদর হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। এখন চিকিৎসা নিচ্ছি। এখন মোটামুটি ভালো। কারণ চিকিৎসা ভালো পাচ্ছি। ডাক্তার দেখছে খুব তাড়াতাড়ি তাই সুস্থ হয়ে বাড়ি যাব।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রেজাউল করিম বলেন, আমাদের পৌর এলাকার ড্রেন গুলা পরিস্কার রাখার জন্য কাজ চলছে। সেই সাথে মশা নিধন কার্যক্রম চলমান আছে। পুরনো বাজেটের টাকা দিয়ে মশা নিধন কার্যক্রম চলছে। এই মশা নিধন কার্যক্রমের জন্য নতুন করে বরাদ্দ নেই। তবে মশার উপদ্রব ঠেকানোর জন্য নিয়মিত বিষ স্প্রে পৌর এলাকার বিভিন্ন জায়গায় চলমান আছে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রকিব সাদি বলেন, আমরা নিয়মিত তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মশারি ব্যবহার না করলে যেসব মশা তাকে কামড় দেবে, সেগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে নিজেরা সংক্রমিত হয়ে অন্য মানুষকে কামড়ানোর মাধ্যমে রোগটি ছড়াতে থাকে। তাই বাড়িতে কারো জ্বর হলে এসময় অবশ্যই তাকে দিনে রাতে মশারির ভেতর রাখতে হবে। হাসপাতালে চিকিৎসার নেয়ার সময়ও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হাসপাতালে আসছে মোটামুটি ডেঙ্গু রোগি। এই সব রোগিদের পর্যাপ্ত সেবা দেয়া হচ্ছে। এই ডেঙ্গু থেকে বাচঁতে হলে বাড়ির আঙ্গিনার চারপাশে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর মশার কামড় থেকে সচেতন থাকতে হবে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর