
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমদ সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে নির্বাচন কমিশনকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভোট পরিচালনায় নিরাপত্তা, সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকের উপস্থিতি এবং আইটি ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়াও, সোশ্যাল মিডিয়া ও অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতা জরুরি।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন ভবনে আয়োজিত সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব পরামর্শ দেন।
ড. নিয়াজ আহমদ বলেন, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ডাকসু নির্বাচন একরকম সকলের সহযোগিতায় হয়েছে। এটা শুনতে মনে হচ্ছে যে আমরা মোটামুটি একটা পায়োনিয়ারিং ধারণায় কাজ করেছি। অতএব, সবাইকে একটু উপদেশ দেওয়ার পর্যায়ে এসেছি। এটি একান্তই ভুল ধারণা। আমরা একরকম যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গেছি। একরকম বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের সহযোগিতা, একরকম কিছুটা গ্রহণযোগ্যতা এটা পেয়েছে। তবে আমরা ‘উই আর মাইলেস পারফেক্ট’ এবং ‘আই ডো অ্যাডভাইস’।" তিনি যে বিষয়গুলোতে উপকার পেয়েছেন, সেগুলোর দু-একটি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, প্রথমত, ধরে নিতে হবে যে যারা হারবেন তারা অসন্তুষ্ট থাকবেন। শিষ্টাচার বলে কিছু যদি থেকে থাকে, সেটির উপর খুব ভরসা করা যাবে না। সুতরাং, আমাদেরকে সেফগার্ড মেজার নিয়ে পরিষ্কার মাঠে নামতে হবে। সেফগার্ড হচ্ছে যত বেশি সম্ভব ক্যামেরা আশেপাশে রাখা যায়। সেটি টেকনিক্যাল ব্যাপার, আপনারা ভালো বুঝবেন। সিসিটিভি বলুন বা সাংবাদিক বলুন, যত চোখ আপনার আশেপাশে রাখা যায়। এটা আপনাকে ধরে নিতে হবে যে এই ব্যাপারটি চ্যালেঞ্জ হবে এবং আপনার ইন্ডিপেন্ডেন্ট কিছু ভেরিফিকেশন লাগবে। এতে একটি হচ্ছে, আমরা সাংবাদিকদেরকে পাশে পেয়েছি এবং প্রথম থেকে অনবরত তাদের সাথে কথা বলেছি। সবসময় সব কথা খুব সুখকর ছিল তাও না; কোনো কোনো ক্ষেত্রে যথেষ্ট বিরক্তিকর কথাবার্তাও ছিল, কিন্তু তাদের সাপোর্ট ইনভ্যালুয়েবল হয়েছে আমাদের জন্য। বিশেষ করে, এই একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট ভেরিফিকেশন পর্যায়ে যখন এলো, তখন তাদের এই ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা ব্যালট পেপার খোলা থেকে শুরু করে বক্স খোলা, একদম গোনা পর্যন্ত এই পুরো প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকরা ছিলেন। আর এর আগে প্রস্তুতি পর্বে তাদের সাথে আমরা রেলেভেন্ট-ইররেলেভেন্ট সবসময় কথা বলেছি।
তিনি আরও বলেন, দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে পর্যবেক্ষক। পর্যবেক্ষকরা আমাদের জন্য লাইফ সেভার ছিলেন। বিশেষ করে বিভিন্ন দল, মত এবং মতাদর্শগত পার্থক্য আছে এমন পর্যবেক্ষক আমাদের সাথে থাকলে এবং তারা যদি পুরো প্রক্রিয়াটি খুব কাছ থেকে দেখেন, ভেরিফিকেশন করেন, তাদের এনডোর্সমেন্ট আমাদের খুবই কাজে লেগেছে। একজন আমার পাশে বসে আছেন, চূড়ান্ত সমালোচক, কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে আমাদের নির্বাচনের বিষয়, তার জন্য তাদের পরামর্শ এবং এনডোর্সমেন্ট ইনভ্যালুয়েবল।
ঢাবি উপাচার্য বলেন, বেশি সংখ্যক সাংবাদিক বা ক্যামেরা দৃশ্যমান থাকবে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে এমনকি প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত। আর দ্বিতীয়ত, পর্যবেক্ষকের উপর নির্ভর করা খুবই প্রয়োজন। আমাকে ধরে নিতে হবে যে আমাকে চ্যালেঞ্জ করা হবে, পরিষ্কার।
আইটির ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইটির ব্যবহার ব্যর্থ হয়, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। অতএব, আইটির কারিগরি বিষয়গুলো আমি ভালো বুঝি না। আপনাদের এখানে যথেষ্ট যোগ্য মানুষ আছেন। বারবার পরীক্ষা করা খুব প্রয়োজন। প্রি-টেস্ট, রান, যা যা দরকার, আইটি সাপোর্টের যেকোনো সার্ভিস আমাদেরকে—বাংলাদেশে যেহেতু তুলনামূলকভাবে অবকাঠামোর দুর্বলতা আছে—এগুলো বারবার করা দরকার। আমাদের ক্ষেত্রে, আমরা যেটা করেছিলাম, বাইরে এরকম ডিসপ্লের ব্যবস্থা করেছিলাম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিসপ্লে চলছিল, কোনো কোনো ক্ষেত্রে সার্ভিস ঠিকমতো কাজ করছিল না, ছিঁড়ে যাচ্ছিল, অ্যাননটে ফ্লো হচ্ছিল না ইত্যাদি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ক্ষেত্রে খুব ছোট পরিসর, আপনার ক্ষেত্রে পুরো দেশের ব্যাপার। আইটি সার্ভিসের ফেস ভ্যালু আছে, কিন্তু সেটি ঠিকমতো ডেলিভারি দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের অবকাঠামোর দুর্বলতার কারণে সমস্যা হবে। সমস্যা হলে এটি বিশ্বাসযোগ্যতাটা সঙ্গে সঙ্গে প্রভাবিত করবে। আইটির মধ্যে একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও আছে; যন্ত্রপাতি ঠিকমতো কাজ করলে উপকার হবে, না করলে জল্পনা বেশি হবে।
আইটির ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইটির ব্যাপারে বারবার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। আপনার ক্ষেত্রে, মাননীয় নির্বাচন কমিশনারকে বলতে চাচ্ছিলাম, কিছু সুনাম অর্জন হয়েছে। ভোটার তালিকা আপডেটের ক্ষেত্রে বাইরে থেকে খবর পাই, একটা লেভেল অফ ক্রেডিবিলিটি তৈরি হয়েছে। এটা খুব খুশি হওয়ার বিষয়। এছাড়াও, পোস্টাল, আইটি-সাপোর্টেড পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা প্রয়োজন।
সোশ্যাল মিডিয়া একটি বাস্তবতা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। এর সাথে আইটি জড়িত, কিন্তু আমি টেকনিক্যাল বিষয়ে যাচ্ছি না। ফেসবুককেন্দ্রিক, ভয়ানক ধরনের হয়রানি, বুলিং মোকাবিলা করা আমাদের তুলনামূলকভাবে কঠিন। আইন প্রয়োগ করা কঠিন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অসাধারণ সহযোগিতা করেছে, কিন্তু থামাতে পারছে না। এটা আমাদের কিছু আইনের দুর্বলতা দেখায় এবং টেকনিক্যাল বিষয়ও ভোটারদের বোঝানো মুশকিল। ইচ্ছা করলেই বন্ধ করা যায় না, এটি সিলেকটিভভাবে করতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার বিষয়গুলো ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করতে হবে।
সময় ও লবি ফ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
তিনি আরও বলেন, যত পরিকল্পনা করা হোক, কিছু ফ্যাক্টর নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকবে। তখন কন্টিনজেন্সি ম্যানেজমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় নেতৃত্ব ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। যদি কেন্দ্রে সমস্যা হয়, অন-দ্য-স্পট সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কোঅর্ডিনেশন গুরুত্বপূর্ণ। ভুল সিদ্ধান্ত হলেও সমস্যা হবে না, তবে নেতার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোটের লক্ষ্য নিয়ে সকল প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে ইসি। অক্টোবরে রাজনৈতিক দল, নারী নেত্রী, জুলাই যোদ্ধা, গণমাধ্যমের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর