
খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও গুইমারা উপজেলার সহিংসতার ঘটনায় বুধবার (১ অক্টোবর) রাতে পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেছে।
এর মধ্যে খাগড়াছড়ি সদরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে হামলা, ভাঙচুর ও সহিংসতা করার অভিযোগে একটি এবং গুইমারা উপজেলায় তিনজনকে হত্যা ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সহিংসতা করার অভিযোগে আরও একটি মামলা করা হয়েছে। আসামিদের বিষয়ে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।
এদিকে, ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে খাগড়াছড়ির পরিস্থিতি। খাগড়াছড়ির শহর ও উপশহরগুলোতে মানুষ ও যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। দূরপাল্লা ও অভ্যন্তরীণ সকল যানবাহন স্বাভাবিকভাবেই চলাচল করছে। তবে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় এখনো ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।
পূর্বের ন্যায় সেনাবাহিনীর স্কটে সাজেকে আসা-যা করছেন পর্যটকরা। জেলাজুড়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সাঁজ সাঁজ রব উঠেছে জেলাজুড়ে। প্রতিদিনই মন্দিরগুলো পরিদর্শন করছেন নিরাপত্তা বাহিনী, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারাও প্রতিদিন মন্দির পরিদর্শন করছেন।
যেকোনো নাশকতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসিয়ে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন করা হয়েছে। দুষ্কৃতকারী শনাক্তে সবাইকে চেকিং করা হচ্ছে। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কেউ যেন আর অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেজন্য দুইয়ের অধিক জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দুইয়ের অধিক জনসমাগম দেখলে তা ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হচ্ছে। এই নজিরবিহীন নিরাপত্তা বেষ্টনীতে রয়েছে পুরো জেলা।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল জানান, "খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলার সহিংসতায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এখন ক্ষতিগ্রস্তরা মামলা করতে চাইলে আমরা মামলা নেব। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী, বিজিবির সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে কাজ করছে।"
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার বলেন, "অবরোধ না থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনো ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলার উন্নতির উপর নির্ভর করে ১৪৪ ধারাও প্রত্যাহার করা হবে। পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।"
উল্লেখ্য, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে সপ্তম শ্রেণির এক মারমা কিশোরী ধর্ষণের শিকার হন। এ ঘটনায় শয়ন শীল নামে একজনকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় গ্রেপ্তার করা হয় এবং বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রাখে পুলিশ।
এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল করে পাহাড়ি বিভিন্ন সংগঠনগুলো। পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে ২৫ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র জনতার ব্যানারে অর্ধদিবস সড়ক অবরোধের ডাক দেওয়া হয়।
এ অবরোধ সফল করতে এতে পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানায় পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) সহ তাদের অনুগত সহযোগী সংগঠনগুলো। অবরোধের নামে জেলাজুড়ে তাণ্ডব চালায় পিকেটাররা।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর