
শারদীয় দুর্গোৎসবের চূড়ান্ত দিন বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনকে কেন্দ্র করে লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে জেলা প্রশাসনের উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত বিজয়া সম্মেলনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জনের এই আয়োজন।
কক্সবাজার জেলার সাতটি উপজেলার প্রতিমা ট্রাকে করে এনে একে একে সাজানো হয় সৈকতে। শুধু তাই নয়, পার্শ্ববর্তী বান্দরবানের লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকেও প্রতিমা নিয়ে আসা হয়েছে। আর চকরিয়া ও পেকুয়ার প্রতিমাগুলো বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে মাতামুহুরী নদীতে। বিকেল পাঁচটায় মন্ত্রপাঠ শেষে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ বছরের দুর্গোৎসব।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি উদয় শংকর পাল মিঠু বলেন, এই আয়োজন শুধু ধর্মীয় আচার নয়, এটি পরিণত হয়েছে লাখো মানুষের মিলনমেলায়। প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এই বিশাল আয়োজন নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হচ্ছে।
সকাল থেকেই সৈকতজুড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি টহল চোখে পড়ে। জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে খোলা হয়েছে জেলা প্রশাসনের সমন্বিত কন্ট্রোল রুম।
জেলা প্রশাসক আব্দুল মান্নান বলেন, তিন স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিসর্জন উৎসব ও পর্যটকদের ভ্রমণ দুটোই নির্বিঘ্ন রাখতে আমরা সর্বোচ্চ প্রস্তুত।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ জানান, পঁচিশ সেপ্টেম্বর থেকেই পর্যটকের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। প্রতিমা বিসর্জন সফল করার লক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
চার দিনের ছুটি ও বিসর্জনকে ঘিরে কক্সবাজারে ভিড় জমেছে লাখো মানুষের। হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী সমিতি জানিয়েছে, সব রুম বুকড হয়ে গেছে।
সংগঠনের সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, আগামী কয়েক দিনে পর্যটকের সংখ্যা পাঁচ লক্ষাধিক ছাড়াতে পারে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে হোটেল মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পরিবার নিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে আসা শিক্ষক রাজেন্দ্র রায় বলেন, কক্সবাজারের আয়োজন সারা দেশে সবচেয়ে বড়। তাই মা দুর্গাকে বিদায় জানাতে আমরা এখানে এসেছি। নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, প্রশাসন সত্যিই আন্তরিক।
এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সাগর এখন উত্তাল। আবহাওয়া অফিস তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে। সাগরে গোসল করা ঝুঁকিপূর্ণ বলে সতর্ক করছে সি সেইফ লাইফ গার্ড।
সংস্থার মাঠ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, লাইফগার্ড সদস্যরা টানা দায়িত্ব পালন করছে। তবে পর্যটকদেরও সচেতন হতে হবে। সৈকতের গুপ্তখাল যেকোনো সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
বিজয়া দশমীর দিনে প্রতিমা বিসর্জন যেন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, হয়ে উঠেছে একটি সামাজিক উৎসব। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে লাখো মানুষ ভিড় জমিয়েছে সৈকতে। সমুদ্রের গর্জনের সঙ্গে ঢাক-ঢোল আর উল্লাস মিলেমিশে কক্সবাজার এখন উৎসবের নগরী।
সর্বশেষ খবর