অভিযুক্তদের মোবাইলের মেসেজ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনার তিন মাস পর এক প্রতিবন্ধী যুবক হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় ভিকটিমের আপন বোনসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে দোষ স্বীকার করেছে। বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) বিকেলে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ভিকটিমের বোন রেশমা খাতুন (২৫), প্রতিবেশী ভাবি হাবিজা খাতুন (৪২), ভদ্রঘাট এসিআই মিলের নিরাপত্তা প্রহরী গোলাম মোস্তফা (৫৫), সুমন চন্দ্র ভৌমিক (২৮), তপু সরকার (১৯) ও শফিকুল ইসলাম (৪০)।
নিহত মানসিক প্রতিবন্ধী শামীম ইসলাম (২৮) সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার কুটিরচর গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে।
সিরাজগঞ্জ ডিবির ওসি একরামুল হোসাইন জানান, ২ জুলাই গোসল করার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন শামীম। এরপর তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। দুইদিন পর ৪ জুলাই ভদ্রঘাট এলাকার এসিআই মিল-সংলগ্ন কচুরিপানায় ভরা একটি পুকুরের ধারে থেকে শামীমের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের বাবা অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন।
ভিকটিম মোবাইল ব্যবহার না করায় এবং আশপাশে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকায় তদন্তে বাধার সম্মুখীন হয় ডিবি পুলিশ। পরে প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার আড়াই মাস পর এক আসামির বান্ধবীকে দেওয়া মেসেজ থেকে হত্যার ক্লু পায় তদন্ত কর্মকর্তা। এ সূত্র ধরে ২৯ সেপ্টেম্বর ভদ্রঘাট এসিআই মিলের প্রহরী গোলাম মোস্তফা, সুমন চন্দ্র ভৌমিক, তপু সরকার ও শফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর নিজ নিজ বাড়ি থেকে রেশমা খাতুন ও হাবিজা খাতুনকে আটক করে পুলিশ।
ওসি একরামুল হোসাইন আরও জানান, জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়—ভিকটিমের বোন রেশমা এসিআই মিলে চাকরির পাশাপাশি নিজ বাড়িতে দেহব্যবসা চালাত। রাতের বেলায় স্থানীয় লোকজন ও মিলের নিরাপত্তা প্রহরীরা সেখানে যেতো। একদিন শামীম তার বোনকে অনৈতিক কাজে দেখে ফেলায় উভয়ের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এ কারণে রেশমা ও প্রহরীরা মিলে শামীমকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার রাতে শামীম চুরি করতে এসিআই মিলে প্রবেশ করলে প্রহরীরা তাকে ধরে প্রতিবেশী হাবিজার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে রেশমাকে ডেকে আনা হয়। এরপর প্রহরীরা শামীমকে ছুরিকাঘাত করে এবং রেশমা তার শরীরে এসিড ঢেলে হত্যা করে। পরে মরদেহটি মিল-সংলগ্ন পুকুরে ফেলে রাখা হয়।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে গোলাম মোস্তফা, সুমন চন্দ্র ভৌমিক ও তপু সরকার ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে জবানবন্দি দেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আইভীন আক্তার তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। ভিকটিমের বোন রেশমা খাতুন ১ অক্টোবর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এম শাহরিয়ার শহিদ বাপ্পির আদালতে জবানবন্দি দেন।
বর্তমানে গ্রেপ্তাররা কারাগারে রয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান ডিবি ওসি।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর