• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৮ সেকেন্ড পূর্বে
মোঃ কামরুল হাসান নিরব
ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৩৬ রাত

জুলাই বিপ্লবের শহীদ শিহাবের হত্যা মামলা প্রত্যাহারে অবিশ্বাস্য প্রতারণা

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

জুলাই বিপ্লবের শহীদ ওয়াকিল আহমেদ শিহাবের হত্যা মামলা প্রত্যাহারের ঘটনাটি ঘিরে চাঞ্চল্য ও বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনীর মহিপালে ৪ঠা আগস্টের সমাবেশে গুলিতে নিহত শিহাবের মায়ের দায়ের করা এই চাঞ্চল্যকর মামলাটি, বাদী বা তার আইনজীবী কেউই না জেনে রহস্যজনকভাবে ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা’ হিসেবে প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

এই ঘটনায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া নিয়ে গভীর প্রশ্ন উঠেছে। গত বছর ৪ঠা আগস্ট ফেনীর মহিপালে অনুষ্ঠিত এক সমাবেশে সশস্ত্র ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের গুলিতে শিহাবসহ মোট ৭ জন শহীদ হন। এই ঘটনায় পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। শিহাবকে গুলি করার দৃশ্য ভিডিওতে ধরা পড়ে, যেখানে ছাত্রলীগ নেতা জিয়া উদ্দিন বাবলুর গুলি করার চিত্র ফুটে ওঠে। পরে তাকে ধরে কপালে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করা হয়েছিল।

শিহাব হত্যার ঘটনায় গত বছর ২০শে আগস্ট ফেনী সদর মডেল থানায় তার মা মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে মামলা করেন (মামলা নম্বর-১৪, জিআর-৩৭২/২০২৪)। এই মামলায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহম্মেদ নাসিম এবং ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীও অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন। এরই মধ্যে পুলিশ ১৫১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে এবং আটক আসামিরা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তবে সম্প্রতি জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক গঠিত রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জেলা কমিটি থেকে শিহাব হত্যা মামলাটিও প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এই সুপারিশ চলতি বছরের ২৩শে মার্চ আইন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, মূল মামলার নম্বর (১৪) এবং তারিখ (২০/০৮/২০২৪) কৌশলে পরিবর্তন করে ভিন্ন একটি নম্বর (২৫) এবং তারিখ (১১/২৪) ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া, প্রধান আসামিসহ তিন সাবেক এমপির নাম বাদ দিয়ে নিচের দিকের দুই আসামি আবদুল্লাহ আল মহসিন ও আবুল কালাম ওরফে ছালাম উল্যাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে বিষয়টি সহজে ধরা না পড়ে। সুপারিশপত্রে জিআর নম্বর ঠিক রাখা হয়েছে (৩৭২/২৪)।

জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কমিটির যাচাই-বাছাইক্রমে জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মেছবাহ উদ্দীন খান এই সুপারিশে স্বাক্ষর করেন এবং মামলাটিকে প্রত্যাহারযোগ্য সিল দেন। তারিখ দেওয়া হয় ২৩/৩/২০২৫। এই ঘটনায় পিপির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যদিও পিপি মেছবাহ উদ্দীন খান বলছেন, এমনটা হওয়ার কথা নয় এবং তার নলেজে নেই যে শিহাবের মামলা প্রত্যাহারের তালিকায় গেছে। তিনি এটিকে 'কম্পিউটার মিসটেক' বলে উল্লেখ করেছেন এবং অফিস খুললে নথি দেখে বিস্তারিত বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে জুলাই অভ্যুত্থানের আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়েরকৃত রাজনৈতিক হয়রানি মামলার তালিকা চাওয়া হয়েছিল, সেখানে জুলাই বিপ্লবের শহীদ শিহাবের মামলা অন্তর্ভুক্ত হওয়া অস্বাভাবিক। এ ধরনের মামলা প্রত্যাহারের জন্য গঠিত কমিটির কার্যপরিধি অনুযায়ী, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনপত্র দাখিল করতে হয়। আবেদনের সঙ্গে এজাহার ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে অভিযোগপত্রের সার্টিফাইড কপি দাখিল করতে হয়। আবেদন প্রাপ্তির ৪৫ দিনের মধ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিপির সুপারিশসহ স্বাক্ষর যুক্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। এক্ষেত্রে শহীদ শিহাবের মামলার বাদী বা তার আইনজীবী কেউই এ ধরনের আবেদন করেননি বলে জানিয়েছেন।

শহীদ শিহাবের মামলার আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন ভূঞা এই ঘটনা শুনে অবাক হয়েছেন। তিনি বলেন, বাদী শত প্রতিকূলতার মাঝেও পুত্র হত্যার বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন। প্রশাসন ও আদালত সর্বাত্মক সহযোগিতা করছেন। তিনি বিনা পয়সায় শিহাবসহ ৭ জন শহীদের মামলার দায়িত্ব নিয়েছেন।

শিহাবের মা মাহফুজা আক্তার জানিয়েছেন, তাকে মামলা থেকে আসামিদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ২৬শে সেপ্টেম্বর তিনজনকে মামলা থেকে বাদ দিলে তিন লাখ টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে তিনি বিচারের কোনো আপস করবেন না বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, "ছেলে হারিয়েছি, আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রত্যাশায় আদালত থেকে থানা, পুলিশ ও আইনজীবী পর্যন্ত তীক্ষ্ণ নজর রাখছি।"

এই ঘটনা ফেনীর মহিপালে ৭ জন শহীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ায় গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে এবং পুরো বিষয়টি স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ info@bd24live.com
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ office.bd24live@gmail.com