
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল-এর সভাপতিত্বে এবং ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরামের যৌথ আয়োজনে "উন্নয়ন ভাবনা প্রেক্ষিত ঝিনাইদহ" শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা শহরের ড্রিমভ্যালি এন্ড রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, উন্নয়নকর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের পক্ষ থেকে ঝিনাইদহের উন্নয়নে তাদের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরামের নেতা জাহিদ হোসেন বিপ্লব, ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লিটন এবং সহ-সভাপতি আসিফ ইকবাল মাখন। উদ্বোধনী বক্তব্যে ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, ঝিনাইদহ একটি সম্ভাবনাময় জেলা, যেখানে কৃষি, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। তিনি এই সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে আগামী দিনের জনপ্রতিনিধিদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ঝিনাইদহে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। তিনি উল্লেখ করেন, অতীতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ব্যাহত হয়েছে। তিনি এমপি নির্বাচিত হলে সরকারি চাকরিজীবীদের ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই করার কথা বলেন। ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ মজিদ বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করা হবে এবং তার দল সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজিমুক্ত সমাজ গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং ৫ আগস্টের পর জেলায় বহুমাত্রিক দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তিনি দখল বাণিজ্য বন্ধে "জিরো টলারেন্স" নীতি গ্রহণের অঙ্গীকার করেন। ঝিনাইদহ জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আলী আজম মোহাম্মদ আবু বকর চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতিমুক্ত ঝিনাইদহ গড়তে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
ঝিনাইদহ ফোরামের সভাপতি অধ্যক্ষ মহাব্বত হোসেন টিপু মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং জেলার সরকারি-বেসরকারি কলেজ, স্কুল ও মাদরাসায় শিক্ষক সংকট ও অবকাঠামোগত সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। ঝিনাইদহ চেম্বারের সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি ঝিনাইদহের বিখ্যাত সবজি, খেজুরগুড় ও দুগ্ধজাত পণ্য দেশব্যাপী ব্র্যান্ডিং করার মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের উপকৃত করার এবং তাঁত ও হস্তশিল্পের বিকাশে সরকারি প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানান।
এনসিপি নেতা হামিদ পারভেজ বলেন, তরুণ প্রজন্মকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না করলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি ঝিনাইদহে তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান, আইটি প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা সহায়তা বাড়ানোর কথা বলেন। ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসিফ কাজল শুধু রাজনৈতিক দল নয়, নাগরিক সমাজকেও উন্নয়নের কাজে যুক্ত করার আহ্বান জানান এবং শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বিত উন্নয়ন পরিকল্পনার ওপর জোর দেন। ঢাকাস্থ ঝিনাইদহ সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শাহনাজ পারভীন পলি ঝিনাইদহকে একটি দৃষ্টান্তমূলক জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়ন ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করার তাগিদ দেন।
এই মতবিনিময় সভা জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহের উন্নয়ন ভাবনায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। সভায় ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সদস্য ছাড়াও বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন, এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। এছাড়া বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও উন্নয়নকর্মীরাও তাদের যুক্তি ও পরামর্শ তুলে ধরেন।
সর্বশেষ খবর