
শেরপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পালের জামিন ইস্যুতে জেলা জজ, পিপি ও জিপির অপসারণসহ ৭ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা, জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
সোমবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে শেরপুর আদালত, পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে আদালতের প্রধান ফটক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। ওই সময় আদালতের ভেতরে কোনো বিচারক-আইনজীবী প্রবেশ করতে না পারায় দুপুর পর্যন্ত বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।
অবরোধ চলাকালে জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক মামুনুর রহমান বলেন, "আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন পালের জামিনের মাধ্যমে তাকে পালানোর সুযোগ দিয়ে আহত জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারসহ আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।" ৭ দফা দাবিগুলো হচ্ছে জেলা জজের অপসারণ, আদালতের পিপি ও জিপির অপসারণ, আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন পালের গোপনীয় জামিনের সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনা, চিহ্নিত আওয়ামী লীগ নেতাদের গ্রেপ্তার, আইনি সহায়তা সেল গঠন ও শহীদদের মামলায় বাণিজ্যকারীদের শাস্তির আওতায় আনা। ওই সময় বক্তব্য রাখেন শেরপুর জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী ইঞ্জিনিয়ার মো. লিখন মিয়া, কেন্দ্রীয় যুবশক্তির সংগঠক মাহমুদুল হাসান রাকিব, সদর উপজেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী নূর ইসলাম, সিনিয়র যুগ্ম সমন্বয়কারী রাশেদুল হাসান দেওয়ান, জেলা যুবশক্তির আহ্বায়ক আশরাফুল আলম, জুলাইযোদ্ধা মো. আরিফ, শহীদ মাহবুবের বড়ভাই মাজহারুল ইসলাম মাসুদ প্রমুখ।
এদিকে, বেলা পৌনে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান আন্দোলনকারীদের কাছে গিয়ে তাদের কথা শোনেন এবং তাদের দাবি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিলে ছাত্র-জনতা অবরোধ ও বিক্ষোভ তুলে নেন। ওই সময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, শেরপুরে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক পিপি চন্দন কুমার পালের জামিন ইস্যুতে গত কয়েক দিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে জেলাজুড়ে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তার বিরুদ্ধে ছাত্র হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়। পরে ভারতে চলে যাওয়ার চেষ্টাকালে ২০২৪ সালের ১৬ অক্টোবর বেনাপোল সীমান্তে আটক হলে পর্যায়ক্রমে ৬ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় তাকে। ওই সব মামলায় তিনি প্রায় ১১ মাস হাজতবাসের পর চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে জেলগেট থেকে ফের গ্রেপ্তার হন তিনি। ওই মামলায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর শেরপুরের দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান তিনি এবং পরদিন সকালে কারামুক্তি লাভ করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের অভিযোগ, আদালতের পিপিসহ বিএনপির কতিপয় নেতা ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা অর্থের বিনিময়ে এ জামিনে সহায়তা করেছেন।
এর জের ধরে দায়রা জজ আদালতের পিপি ও শহর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হযরত আলীসহ বিএনপির নেতাদের ওপরও সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। পরে তারা সংবাদ সম্মেলন করে এসব অপপ্রচার ও প্রতিহিংসার জের বলে অভিযোগ করেন। পাল্টা হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সংবাদ সম্মেলন করে চন্দন পালকে গ্রেপ্তারসহ জামিন কাণ্ডে জড়িতদের শাস্তির দাবিতে আল্টিমেটাম দেয়।
সর্বশেষ খবর