
সংসারের চরম টানাপোড়েনের মধ্যে গরুর বদলে নিজের বুক দিয়ে স্ত্রীসহ ঘানি টেনে সংসার চালানো মোস্তাকিনের পাশে দাঁড়াল উপজেলা প্রশাসন। তাকে নিয়ে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তা উপজেলা প্রশাসনের নজরে আসে। প্রশাসন মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় ওই কলুর বাড়িতে গিয়ে চার বান্ডিল টিন, নগদ ১২ হাজার টাকা, চার প্যাকেট শুকনো খাবার, পাঁচটি কম্বল ও এক মণ সরিষা প্রদান করে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাহাগিলী ইউনিয়নের উত্তর দুড়াকুটি পাগলাটারি গ্রামের মোস্তাকিন দম্পতি প্রায় তিন যুগ ধরে বুক দিয়ে ঘানি টেনে সংসার চালাচ্ছেন। বড় ছেলে মিলন মিয়া (৪৫) সাদাসিধা প্রকৃতির এবং তার শরীরে অপুষ্টির ছাপ রয়েছে। মেজো ছেলে শাহজাহান (৩৫) একমাত্র কর্মক্ষম পুরুষ ছিলেন। সম্প্রতি কাঁধে দুটি টিউমার হওয়ায় তিনি ঠিকমতো কৃষিকাজ করতে পারেন না। ছোট ছেলে আদম আলী (২৫) এক ধরনের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। মোস্তাকিনের ছয় বছরের নাতনি শাহনাজ শারীরিক প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে যৌতুকের কারণে স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে মেয়ে রূপালী (২০) এখন তার বাড়িতে আশ্রিত। বাধ্য হয়েই নয় সদস্যের সংসার চালাতে স্ত্রী ছকিনা (৬০) সহ বুক ও কোমর দিয়ে ঘানি টেনে তেল উৎপাদন করে তা বাজারে বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চালান মোস্তাকিন।
উপজেলা প্রশাসন মঙ্গলবার বিকেলে এ দম্পতির পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। চার বান্ডিল টিন, নগদ ১২ হাজার টাকা, চার প্যাকেট শুকনো খাবার, পাঁচটি কম্বল ও এক মণ সরিষা নিয়ে ওই দম্পতির বাড়িতে উপস্থিত হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা। তিনি তাদের হাতে এসব সামগ্রী ও অর্থ তুলে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লতিফুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাকির হোসেন, ইউপি সদস্য ডাবলু হোসেন প্রমুখ।
এলাকাবাসীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বুক দিয়ে ঘানি টেনে মোস্তাকিনকে সংসার চালাতে দেখেছেন তারা। তারা আশা করছেন, এসব পেয়ে মোস্তাকিন ঘুরে দাঁড়াবেন এবং হয়তোবা আর বুক দিয়ে ঘানি টানতে হবে না তাকে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা লতিফুর রহমান জানান, মোস্তাকিনকে সহযোগিতা হিসেবে চার বান্ডিল টিন, নগদ ১২ হাজার টাকা, চার প্যাকেট শুকনো খাবার, পাঁচটি কম্বল ও এক মণ সরিষা দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রীতম সাহা জানান, মিডিয়ার মাধ্যমে সম্প্রতি মোস্তাকিনের দুঃখের কাহিনী দেখে তারা তার পাশে সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। টিন, টাকা, শুকনো খাবার, কম্বল, সরিষা তাকে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে। এছাড়া তার স্ত্রী, স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে ও প্রতিবন্ধী নাতনীকে ভাতার আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর