
খাগড়াছড়িতে কর্মরত সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তা চেয়ে ৪ দফা দাবিতে মানববন্ধন, ১ ঘণ্টার কর্মবিরতি ও প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বুধবার (৮ অক্টোবর) সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বরে মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে কর্মসূচির শুরু হয়। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবের সভাপতি তরুণ কুমার ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাহরিয়ার ইউনুস, সাংবাদিক জয়ন্তী দেওয়ান, মো. আবদুর রউফ, খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক, হলাপ্রু মারমা সহ অন্যান্যরা।
এরপর খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ১ ঘণ্টাব্যাপী কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেন সাংবাদিকরা। কর্মবিরতি চলাকালে নিচে নেমে এসে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাঁদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালনের নিশ্চয়তার বিষয়ে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
পরে দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, খাগড়াছড়িতে সাম্প্রতিক সময়ে সংবাদকর্মীরা তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিভিন্নভাবে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে খাগড়াছড়ি জেলায় আলোচিত 'ধর্ষণ' এর অভিযোগকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সৃষ্ট সহিংসতার সময় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পেশাদার সাংবাদিকেরা হয়রানি, হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, সাইবার বুলিং ও মানহানিকর প্রচারণাসহ নানা রকম হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন।
'মনের মতো' সংবাদ পরিবেশন করা না হলে দুষ্কৃতকারীরা সংবাদকর্মীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংবাদকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটূক্তি, কুৎসিত মন্তব্য এমনকি হত্যার হুমকিরও শিকার হচ্ছেন। গত ২৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চলাকালে পেশাদার সাংবাদিকেরা আক্রমণের শিকার হয়েছেন।
এসময় সংঘর্ষে জড়ানো উভয়ের পক্ষের দুর্বৃত্তের দ্বারা হামলা ও মারধরের সম্মুখীন হন। এর আগে ২০২৪ সালে ৪ঠা আগস্ট ফ্যাস্টিট হাসিনা সরকার পতনের একদিন আগে খাগড়াছড়িতে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দ্বারা কয়েকজন সাংবাদিক আক্রান্ত হয়েছেন। জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়েও সাংবাদিকদের টার্গেট করা হয়। ২০২৪ সালের ১লা অক্টোবর খাগড়াছড়িতে সদর উপজেলায় শিক্ষক হত্যার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চেষ্টার ঘটনা ঘটে। এছাড়া চলতি বছর একটি বিশেষ মহলের উস্কানিতে বৈসাবি উৎসবের সময়েও সাংবাদিকদের সংবাদ প্রচারে বাধা ও হেনস্তা করার চেষ্টা করা হয়েছিল, যা কখনোই কাম্য হতে পারে না।
স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। কিন্তু খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকতা গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা মুক্ত সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিপন্থী।
গত কয়েক মাসে খাগড়াছড়িতে কর্মরত একাধিক সাংবাদিক বিচার চেয়ে আদালতে মামলা ও থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করলেও চিহ্নিত আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এ অবস্থায় খাগড়াছড়ির সাংবাদিক সমাজ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সংকট নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছে।
দাবিসমূহ হলো— ১। সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ও দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সাংবাদিকদের হত্যাসহ লাঞ্ছিত করার হুমকি দাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ২। ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে রাষ্ট্র, গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে মানহানিকর প্রচারণাকারীদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৩। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকদের হয়রানি বা বাধাগ্রস্ত হলে দ্রুত প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা পর্যায়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে। ৪। গণমাধ্যমকর্মীদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সেনাবাহিনী প্রধান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, তথ্য উপদেষ্টা, জিওসি চট্টগ্রাম এরিয়া, রিজিয়ন কমান্ডার খাগড়াছড়ি ও গুইমারা, বিজিবি সেক্টর কমান্ডার খাগড়াছড়ি ও গুইমারা, ডেট কমান্ডার খাগড়াছড়ি ডিজি এফ আই, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জাতীয় প্রেসক্লাব বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করা হয়।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর