
জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থান দমন অভিযানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ’ দিয়েছিলেন বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সোমবার ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও কর্নেল রাজিবের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দ্বিতীয় দিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনকালে এ তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
চিফ প্রসিকিউটর আদালতে ‘দ্য ডে ইলি স্টার’-এর একটি স্পেশাল ভিডিও রিপোর্ট প্রদর্শন করেন, যাতে দেখা যায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি অডিও কল রেকর্ডের কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই কল রেকর্ডে শেখ হাসিনা এক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাকে আন্দোলন শুরুর আগেই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।
প্রসিকিউশন পরে আদালতে সেই অডিও কল রেকর্ডটি শোনায়। রেকর্ডে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, “ওরা কিন্তু জায়গায় জায়গায় এখন জমা হতে শুরু করেছে। মিরপুর ১০ নম্বর, উত্তরা, তারপর ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং বিভিন্ন জায়গায়৷ শুরুতেই কিন্তু ইয়ে... করতে হবে, একদম শুরুতেই। ধাওয়া দিলে এরা গলিতে গলিতে থাকবে। এবার আর কোনো কথা নাই, এবার শুরুতেই দিবা।”
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালকে জানান, শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথনে অপর প্রান্তে ছিলেন কর্নেল রাজিব, যিনি তখন প্রধানমন্ত্রীর ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
তাজুল ইসলাম আদালতকে জানান, শেখ হাসিনার এই কথোপকথন ছিল স্পষ্টভাবে গুলি চালানোর নির্দেশ, যার পরই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত বিক্ষোভকারীদের ওপর সহিংস অভিযান শুরু হয়।
প্রসিকিউশন দাবি করে, এই নির্দেশের ফলেই জুলাই–আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের সময় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও দমন অভিযান চালানো হয়, যা মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
চিফ প্রসিকিউটর আরও জানান, কর্নেল রাজিব বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া আসামিদের বিরুদ্ধে উপস্থাপিত অন্যান্য প্রমাণ ও সাক্ষ্যেও এই নির্দেশের প্রতিফলন পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
এ সময় ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত আইনজীবী ও সাংবাদিকদের সামনে ভিডিও রিপোর্টটি প্রদর্শন করা হলে আদালতে এক পর্যায়ে নীরবতা নেমে আসে। শুনানি চলাকালে প্রসিকিউশন পক্ষ যুক্তি দেয়, শেখ হাসিনার এই নির্দেশই ছিল রাষ্ট্রীয় বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের প্রধান কারণ।
আগামী শুনানিতে প্রসিকিউশন তাদের যুক্তিতর্কের বাকি অংশ উপস্থাপন করবে বলে আদালতকে অবহিত করে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর