
কক্সবাজারের উখিয়ার মরিচ্যা এলাকা থেকে একটি বিশাল ইয়াবা পাচার নেটওয়ার্কের অন্যতম হোতা, স্থানীয় যুবদল নেতা মো. তাজ উদ্দিনকে শনিবার রাতে যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১৫ ও ৬৪ বিজিবি। রাজনীতির ছায়া, টাকার প্রভাব আর ভয়ভীতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি এই সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিলেন বলে অভিযোগ।
তাজ উদ্দিন পূর্ব মরিচ্যা এলাকার মৃত সেহের আলীর ছেলে। তিনি হলদিয়াপালং ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি এবং কক্সবাজার জেলা তাঁতীদলের সভাপতি ডা. নাসির উদ্দিনের ছোট ভাই। স্থানীয়ভাবে তিনি রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবার পরিচালনা করে আসছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাজ উদ্দিন একাধিকবার ইয়াবাসহ র্যাব ও পুলিশের হাতে আটক হলেও প্রতিবারই জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় ব্যবসা শুরু করতেন। তার বিরুদ্ধে উখিয়া ও টেকনাফ এলাকায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক পদ ও পারিবারিক প্রভাব ব্যবহার করে তিনি প্রশাসনের চোখে ধুলো দিতেন। দলীয় কিছু প্রভাবশালী নেতা, স্থানীয় দালালচক্র ও একাংশ সাংবাদিককে অর্থ দিয়ে নিজের কার্যক্রম আড়াল করতেন। এমনকি মরিচ্যা বাজার উচ্চমূল্যে ইজারা নেওয়ার পেছনেও তার অবৈধ টাকার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে।
একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাজ উদ্দিন এলাকায় এতটাই প্রভাবশালী ছিল যে, কেউ মুখ খুলত না। পুলিশ বা প্রশাসনও তাকে ঘাঁটাতে চাইত না।
র্যাব-১৫ এর সহকারী পরিচালক (ল’ অ্যান্ড মিডিয়া) সহকারী পুলিশ সুপার আ. ম. ফারুক বলেন, তাজ উদ্দিন কক্সবাজার জেলার শীর্ষ মাদক কারবারিদের একজন। সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতেন তিনি। মাদকবিরোধী অভিযানে র্যাবের জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রয়েছে। সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত অভিযান চলছে এবং তা চলবে।
তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার হওয়া তাজ উদ্দিনকে আইনি প্রক্রিয়ার জন্য উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উখিয়ার সচেতন মহল ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা মনে করেন, শুধু তাজ উদ্দিনকে আটক করলেই সমস্যার সমাধান হবে না। তাকে রিমান্ডে এনে তার পেছনের ইয়াবা সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক, অর্থের উৎস এবং প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকদের নাম বের করা জরুরি।
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, এই এলাকায় মাদকচক্র অনেক গভীরে। তাজ উদ্দিন একজন নামমাত্র ব্যক্তি— তার আড়ালে আরও বড় নেটওয়ার্ক আছে। সেটি উন্মোচন না করলে ইয়াবা বন্ধ হবে না।
দলীয় পরিচয়ে মাদক ব্যবসায় জড়ানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় যুবদল নেতাকর্মীরাও। তাদের দাবি, তাজ উদ্দিনের মতো বিতর্কিত ব্যক্তিদের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
মরিচ্যা ও আশপাশের এলাকায় তাজ উদ্দিনের গ্রেপ্তারের খবরে সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। স্থানীয়রা র্যাব ও বিজিবির এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে ভবিষ্যতেও এমন অভিযান অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
একজন স্থানীয় তরুণ বলেন, এমন অভিযান নিয়মিত হলে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত থেকে মাদক চক্রের দাপট কমে যাবে। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই।
উখিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব খায়রুল আমিন বলেন, তাজ উদ্দিনকে কয়েক বছর আগেই আমরা দল থেকে বহিষ্কার করেছি। তারপরও মাঝে মাঝে তাকে বিভিন্ন মিছিল বা কর্মসূচির সামনের সারিতে দেখা যায় কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউকে জোর করে ঠেলে বের করে দেওয়া আমাদের পক্ষে সবসময় সম্ভব হয় না।
তিনি আরও বলেন, একসময় সে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল, এখন নাকি অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছে— এমন কথাও শোনা যাচ্ছে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর