
বিউটি পার্লারে লোভনীয় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে পাচার হওয়ার পর দেহব্যবসার অন্ধকার জগতে ঠেলে দেওয়া দুই বাংলাদেশি তরুণীকে উদ্ধার করেছে ভারতের পুনে পুলিশ। মানব পাচারের এই আন্তঃদেশীয় চক্রের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রজু পাটিল নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সোমবার পুনের কাত্রজ এলাকায় এক তরুণীর ফোন পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুনের আম্বেগাঁও পাঠার এলাকার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে আরও একজন তরুণীকে উদ্ধার করা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, দুই তরুণীই বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া নিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে।
পুনে পুলিশের তথ্যমতে, কাত্রজ এলাকার একটি ফ্ল্যাটে আটকে থাকা প্রথম তরুণী নিজেই পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে সাহায্য চান। পরে সহকারী পুলিশ ইন্সপেক্টর স্বপনিল পাটিল এবং সিনিয়র ইন্সপেক্টর রাহুলকুমার খিলারের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে তরুণীটিকে উদ্ধার করা হয়। এর পর তার বর্ণনার ভিত্তিতে একই দিন বিকেলে আম্বেগাঁও পাঠার এলাকার আরেকটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে দ্বিতীয় তরুণীকেও উদ্ধার করা হয়।
ঘটনাস্থল থেকে দালালচক্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে রজু পাটিলকে ধনকাওয়াদি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত তাকে তিন দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রজু পাটিলের স্ত্রীও এই পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাকে ধরতে অভিযান চলছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে অননুমোদিত এজেন্ট, জাল পাসপোর্ট ও কাজের ভিসার কাগজ তৈরি করে তরুণীদের ভারতে পাচার করা হতো। পরে তাদের বিভিন্ন শহরে বিতরণ করে যৌনপেশায় বাধ্য করা হতো। পুলিশের ধারণা, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। গত কয়েক মাসে পুনে শহরের বুধওয়ার পেথ, কাত্রজ, আম্বেগাঁওসহ একাধিক এলাকায় একই ধরনের পাচারচক্র সক্রিয় রয়েছে।
উদ্ধারকৃত দুই তরুণীকে বর্তমানে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়েছে। প্রশাসন তাদের শারীরিক পরীক্ষা, মানসিক সহায়তা ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় এনজিও ও সামাজিক সেবা দপ্তর যৌথভাবে তাদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করছে।
মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, এই ঘটনা কেবল অপরাধ নয়, বরং এটি একটি মানবিক সংকট। চাকরির আশায় সীমান্ত পার হওয়া তরুণীরা প্রায়ই প্রতারণার শিকার হন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানো, অনলাইন চাকরির বিজ্ঞাপন যাচাই ও বিদেশগামী নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর