
বহুল আকাঙ্ক্ষিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ভিপি (সহসভাপতি) ও জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। এই জয়ের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা সেই নেতৃত্বের আসনে ফিরলেন।
অন্যদিকে এজিএস (সহ-সাধারণ সম্পাদক) পদে জয়ী হয়েছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্রার্থী। এছাড়া ১৪টি হল সংসদের ফলাফলেও বড় ব্যবধানে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবির। নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঝামেলা ছাড়া বড় অঘটন ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ভোর সাড়ে চারটায় বিবিএ অনুষদের অডিটোরিয়ামে সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে ছাত্রদলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুইটি হলের ভিপি পদে ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।
ফলাফলে দেখা গেছে, ভিপি পদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ইব্রাহিম রনি ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়েছেন। তিনি সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্যানেলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।
জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব ৮ হাজার ৩১ ভোট পেয়েছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।
চাকসুতে ২৬টি পদে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান। তিনি এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট। ছাত্রশিবিরের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এ ছাড়া সহ–খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন তামান্না মাহবুব নামের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী।
চাকসু নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরা হলেন- ভিপি ইব্রাহিম হোসেন রনি, জিএস সাঈদ বিন হাবিব, এজিএস আইয়ুবুর রহমান তৌফিক, খেলাধুলা - মোহাম্মদ শাওন, সহ-খেলাধুলা সম্পাদক পদে তামান্না মাহবুব স্মৃতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক হারেজুল ইসলাম, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা জিহাদ আহনাফ, দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, সহ-দপ্তর সম্পাদক জান্নাতুল আদন নুসরাত, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক নাহিমা আক্তার দ্বীপা, সহ-ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক জান্নাতুল ফেরদৌস রিতা, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক তানভীর আঞ্জুম শোভন, সমাজসেবা ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক তাহসিনা রহমান, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক আহনাফ হাসান ইমরান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক মোনায়েম শরীফ, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সোহান, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক মো. ইসহাক ভূইয়া, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল সালমান, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মো. ফজলে রাব্বি তৌহিদ, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক মাসুম বিল্লাহ। পাঁচ কার্যনির্বাহী সদস্য পদে যথাক্রমে জান্নাতুল ফেরদৌস, আদনান শরীফ, আকাশ দাশ, সালমান ফারসি, মোহাম্মদ সোহানুর রহমান।
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু), হল ও হোস্টেল সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার সকাল ৯টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ১৩ প্যানেল; ২৩২ পদে মোট প্রার্থী ৯০৮ জন।
জানা গেছে, ভোটারদের কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি ভোট দিতে হয়। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ২৬টি ও হল সংসদের ১৪টি পদে ভোট দিতে সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট। ফলে একজন শিক্ষার্থীকে গড়ে প্রতি ২০ সেকেন্ডে একটি করে ভোট দিতে হয়।
এ নির্বাচনের ভোট হয়েছে ব্যালট পেপারে। গণনা করা হয়েছে ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে ভোটাররা বৃত্ত পূরণ করে ভোট দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬ পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। অন্যদিকে ১৪টি হল ও একটি হোস্টেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৯৩ জন। তাদের মধ্যে নারী মাত্র ৪৭ জন। প্রতিটি হলে রয়েছে ১৪টি করে পদ। নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৮ জন।
নির্বাচন বিতর্কমুক্ত করতে অনুষদের ডিনদের রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভাগের সভাপতিরা ছিলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা। ভোটার তালিকায় সংযুক্ত করা হয়েছে ছবি। শহরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে শাটল ট্রেনের সময়সূচি বাড়ানো হয়েছে। এদিন ১১ বার করে শহর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছে শাটল ট্রেন। এ ছাড়া চলাচল করেছে ১৫টি বাস।
চাকসু নির্বাচনে শিবিরের সর্বশেষ জয় এসেছিল ১৯৮১ সালে। ওই নির্বাচনে ভিপি হন জসিম উদ্দিন সরকার আর জিএস হন আবদুল গাফফার। দুজনই ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন নেতা।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর