
১৯৯৮ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হন আব্দুল হান্নান। সংসারের হাল ধরতে শুরু করেন চা দোকানের ব্যবসা।
২০২১ সালে সবার অগোচরে ভোকেশনালে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ২০২৩ সালে মেয়ে হালিমার খাতুনের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকাজুড়ে প্রশংসা কুড়ান। নাটোরের লালপুর উপজেলার এই বাবা-মেয়ে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায়ও একসঙ্গে কৃতকার্য হয়েছেন।
হালিমা খাতুন (১৭) উপজেলার গোপালপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৩.১৭। আর বাবা আব্দুল হান্নান (৪২) বাঘা কাকড়ামারি কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৩৩ পেয়েছেন। তাদের বাড়ি লালপুর উপজেলার গোপালপুর পৌরসভার নারায়ণপুর মহল্লায়।
হান্নানের বড় ছেলে আবু হানিফ নিরব (১৩) নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ছে। ছোট ছেলে রমজান মিয়ার বয়স ছয় বছর। গতকাল বৃহস্পতিবার আব্দুল হান্নানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাবা-মেয়ের একসঙ্গে এইচএসসি পাসের খবরে অভিনন্দন জানাতে এসেছেন প্রতিবেশীরা।
মাসুদ রানা নামের এক প্রতিবেশী বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই, এটা আবারও প্রমাণ করেছেন আব্দুল হান্নান।
মেয়ে হালিমা খাতুন বলেন, ‘আমি আমার বাবাকে নিয়ে গর্ব করি। আমরা একসঙ্গে এসএসসি পাসের পর এবার এইচএসসি পরীক্ষাতেও পাস করলাম। বাবা আমাকে লেখাপড়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি নিজেও পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন। বাবার এই সফলতায় সবাই আনন্দিত।’ হালিমা মনে করেন, তাঁর বাবাকে দেখে অন্যরাও পড়াশোনায় অনুপ্রাণিত হবেন।
মেয়ের সঙ্গে মাস্টার্স ডিগ্রিও অর্জনের ইচ্ছা আব্দুল হান্নানের। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস হাইস্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করতে পারেননি। পরে লেখাপড়া করা হয়নি। পৈতৃক সূত্রে গোপালপুর রেলগেট এলাকায় পাওয়া দোকানে চায়ের ব্যবসা শুরু করেন।
চা বিক্রি করে লেখাপড়া চালানো কঠিন হয়। তাই চায়ের দোকান ভাড়া দিয়ে তিনি নিজের জমিজমা দেখাশোনা ও কৃষিকাজ করছেন। পাশাপাশি লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর