
বরগুনার পাথরঘাটায় বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে কাঠের তৈরি অবৈধ শিল্পভিত্তিক ট্রলিং ট্রলার বন্ধের দাবিতে কয়েক হাজার জেলে মানববন্ধন করেছেন।
রোববার (১৯ অক্টোবর) বেলা ১১টার সময় পাথরঘাটা গোল চত্বরে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরীর নেতৃত্বে এই কর্মসূচিতে বহু সংখ্যক জেলে অংশগ্রহণ করেন।
গোলাম মোস্তফা চৌধুরী জানান, বিত্তবান ও প্রভাবশালী ট্রলিং ট্রলার মালিকরা সাধারণ জেলেদের নীরব নির্যাতন করে ইলিশ সম্পদ ধ্বংস করছে। মা ইলিশ সুরক্ষায় সাধারণ জেলেরা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা পালন করেছে। এখন নতুন করে ট্রলিং ট্রলার মালিকরা তাদের অবৈধ জাল নিয়ে ইলিশের পোনা ধ্বংস করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রশাসন সবকিছু জেনেও নীরবতা পালন করছে। তিনি অভিযোগ করেন, "বেড়ায় ক্ষেত খাচ্ছে।" প্রশাসন যদি এই ট্রলার বন্ধ করতে না পারে, ভবিষ্যতে সাগরে ইলিশ সম্পদের ওপর হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতি, বিএফডিসি মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতি, বিএফডিসি ঘাট শ্রমিক ইউনিয়ন, বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়ন, বিএফডিসি মৎস্য পাইকার সমিতিসহ সাধারণ জেলেরা।
পাথরঘাটা উপজেলা চরদুয়ানি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম, বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন, উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি মারুফ চৌধুরী, ট্রলার শ্রমিক কোভিদ হোসেন ও নিজামুদ্দিন মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম জানান, শিল্পভিত্তিক কাঠের তৈরি অবৈধ ট্রলিং সাগর-নদীতে অবাধে মাছ শিকার করছে। প্রতিদিনই এর সংখ্যা বাড়ছে। ট্রলিংয়ের অত্যাচারে সাগর ও নদীতে ছোট ছোট পোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রজাতির ডিমওয়ালা মাছ মারা যাচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত এই ট্রলিংয়ের কারণে ইলিশসহ সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ বিলুপ্ত হচ্ছে। এমনকি কাঠের তৈরি ট্রলিং জাহাজ সরকারি আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সীমানা অতিক্রম করে উপকূলের কাছাকাছি এসে মাছ ধরছে।
পাথরঘাটা উপজেলার কয়েক হাজার সাধারণ ট্রলার মালিক সরকারের আইন ও বিধি মানলেও, কিছু সংখ্যক দেশি-বিদেশি ট্রলার মালিক অবৈধভাবে ট্রলিং করে সমুদ্রে মাছ শিকার করছে। তাঁরা আরও জানান, এই অবৈধ ট্রলিংয়ের কারণে অল্পদিনের মধ্যেই সমুদ্রে মৎস্য সম্পদ কমে যাবে। ফলে সরকার শুধু রাজস্ব থেকে বঞ্চিতই হবে না, সমুদ্রের মাছ বিলুপ্ত হওয়ায় দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সম্প্রতি এর মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। সরকারি আইন অনুযায়ী উপকূলে ৪০ মিটারের মধ্যে প্রবেশ করে মাছ শিকার করা সম্পূর্ণ অবৈধ, অথচ প্রতিনিয়ত ট্রলিং ট্রলার উপকূলে এসে মাছ শিকার করছে। শুধু তাই নয়, ট্রলারের জালও কেটে নিয়ে যাচ্ছে। সাগরে এর প্রতিবাদ করলে জেলেদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দসহ মারধর করা হয়।
অতি শীঘ্রই সারাদেশে এসব অবৈধ ট্রলিং ট্রলার বন্ধ করা না হলে সাধারণ জেলেরা আইন নিজ হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। এতে রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হলে জেলেরা দায়ী থাকবে না বলেও তাঁরা জানান।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর