
নির্বাচনে পিআর পদ্ধতি নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন জামায়াতের সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সংবাদমাধ্যমে নাহিদ ইসলামের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ও হামিদুর রহমান আজাদ।
রোববার এহসানুল মাহবুব জুবায়ের সাংবাদিকদের বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে নাহিদ ইসলামের পিআর নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন ইস্যুতে এ ধরনের বক্তব্য অপ্রত্যাশিত ও অগ্রহণযোগ্য। যা কোনোভাবে সমর্থন করে না জামায়াতে ইসলামী।’
জামায়াতের আরেক কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, যে কোনো দলের ব্যাপারে অন্য দলের শিষ্টাচার বজায় রেখে মন্তব্য করা ভালো। ব্লেম-গেম বা দোষারোপের রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কারণ পুরনো রাজনৈতিক ধারা এটাই ছিল। রাজনীতির সেই পুরনো ধারা থেকে বের হয়ে আমরা চেয়েছিলাম ব্লেম-গেমের রাজনীতিকে বিদায় করতে।
আমরা চাই ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারা তৈরি করতে। সেটাই প্রত্যাশা ছিল আমাদের।
জামায়াতের এই নেতা মনে করেন, কোনো দল বা ব্যক্তি যখন সামঞ্জস্যতা কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান হারিয়ে ফেলে যে কোনো কিছুই বলতে পারে। সেটা যে কোনো দলের কৌশল কিংবা রাজনৈতিক অবস্থান।
এনসিপিকে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা নিজেরা জাতিকে স্বপ্ন দেখানোর কথা বলে, যারা জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করেন এবং আগামীর নতুন বাংলাদেশ গড়ার কথা বলে সে জায়গা থেকে তাদের সবাইকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়েই কাজ করা উচিত।
তিনি মনে করেন- এই ধরনের বক্তব্য ছিল পুরনো রাজনৈতিক ধারা। যে কারণে এনসিপিরও উচিত ছিল দায়িত্বশীলতা ও সৌজন্যতাবোধ বজায় রেখে মন্তব্য করা।
এর আগে নাহিদ ইসলাম তার পোস্টে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর তথাকথিত ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) আন্দোলন’ ছিল একটি সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতারণা। রোববার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
পোস্টে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আন্দোলনটি ইচ্ছাকৃতভাবে গঠিত হয়েছিল ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রক্রিয়াকে ভ্রান্ত পথে চালিত এবং জনগণের অভ্যুত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র ও সংবিধান পুনর্গঠন-সংক্রান্ত জাতীয় সংলাপকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য।
নাহিদ লেখেন, ভোটের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে একটি উচ্চকক্ষ গঠনের মূল সংস্কার দাবি ছিল সংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা। আমরা এমন ভিত্তিগত সংস্কারের চারপাশে একটি গণআন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলাম এবং জুলাই সনদের আইনি কাঠামোকে বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম।
তিনি আরও লেখেন, কিন্তু জামায়াত ও তার মিত্ররা এ এজেন্ডাকে ছিনতাই করে একে সুকৌশলে পিআর ইস্যুতে নামিয়ে আনে এবং বিষয়টিকে নিজেদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থে দর-কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল না সংস্কার, বরং ছিল কৌশলী প্রতারণা।
নাহিদের অভিযোগ, জামায়াত কখনোই সংস্কারমূলক আলোচনায় অংশ নেয়নি- না জুলাই অভ্যুত্থানের আগে, না পরে। তারা কখনোই কোনো গঠনমূলক প্রস্তাব দেয়নি, কোনো সংবিধানিক দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেনি, কিংবা একটি গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।
নাহিদ জানান, ঐকমত্য কমিশনে জামায়াতের হঠাৎ করে ‘সংস্কারের’ পক্ষে অবস্থান নেওয়া আদর্শগত বিশ্বাসের প্রকাশ ছিল না, বরং এ ছিল একটি রাজনৈতিক অনুপ্রবেশ, সংস্কারের ছদ্মবেশে নাশকতা।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আজ বাংলাদেশের মানুষ এই প্রতারণা স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছে। তারা সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং মিথ্যা সংস্কারক বা কারসাজিকারী গোষ্ঠীর দ্বারা আর প্রতারিত হবে না। না সর্বশক্তিমান আল্লাহ, না এই দেশের সার্বভৌম জনগণ -কেউই আর কখনো অসৎ, সুবিধাবাদী ও নৈতিকভাবে দেউলিয়া শক্তিকে শাসন করার অনুমতি দেবে না।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর