
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ভোটের আগে-পরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় পরিসরে বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেনাবাহিনী, পুলিশ, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ডসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মাঠে থাকবে আট দিনব্যাপী। সোমবার আইনশৃঙ্খলা বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, বাহিনীগুলোর সমন্বিত উপস্থিতিতে প্রতিটি কেন্দ্রে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে, যাতে শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক ভোট আয়োজন করা যায়।
সোমবার (২০ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে মহাপুলিশ পরিদর্শকসহ বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকে এমন তথ্য উত্থাপনা করা হয়েছে।
বৈঠকে পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব আখতার সাংবাদিকদের বলেন, অস্ত্রগুলো উদ্ধারের বিষয়ে উনারা বলেছেন, যে এখন পর্যন্ত ৮৫ শতাংশ তারা রিকভারি করেছেন। আরো কিছু অস্ত্র এবং কিছু গোলাবারুদ এখনো পর্যন্ত আছে। কিন্তু প্রক্রিয়া চালু আছে। চলমান আছে।
ভোটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য মোতায়েন থাকবে-এমন আভাস দিয়ে ইসি সচিব বলেন, সশস্ত্র বাহিনী ৯০ হাজার থেকে এক লাখ, আনসারের পাঁচ থেকে ছয় লাখ, পুলিশের দেড় লাখ সদস্য মোতায়েন করা হবে। সশস্ত্র বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী হিসেবে মোতায়েন হবে নাকি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের অধীন হবে সেটা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ(আরপিও) সংশোধন হয়ে এলে নির্ধারণ হবে। এক্ষেত্রে আরপিও-এর সঙ্গে যেন সাংঘর্ষিক না হয়, সেটা দেখা হবে।
তিনি বলেন, পুলিশের বডি ওউর্ন ক্যামেরা থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছাড়া কেউ ড্রোন ব্যবহার করতে পারবে না। তবে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ব্যবহার করবে। তারা বলেছে, যানবাহন একটা সমস্যা। তবে এক্ষেত্রে রিকোজিশন করতে হবে।
ইসি সচিব বলেন, আজকে সূচনা হলো আলোচনার। কনক্লুসিভ কোনো কিছু না। এটা ধারাবাহিকভাবে আরো আগাবে। আরেকটা বড় জিনিস আছে যেটা বাজেট।প্রত্যেকটা অর্গানাইজেশন প্রত্যেকটা ইউনিটে একটা বাজেট, তাদের খরচ আছে। সেটা আমাদের দেবেন। আমরা ইলেকশন বাজেটের সাথে যেটা সম্পর্কিত সেটা বাজেটটা করব।
তারা নির্বাচন নিয়ে কোনো ঝুঁকি দেখছি কিনা এবং আইনশৃঙ্খলার যে পরিস্থিতি আছে, সেটা কতটুকু ভোটের জন্য আপনার উপযোগী-এমন প্রশ্নের জবাবে আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচনের সময়সীমাটা আমাদের হচ্ছে- তফসিল ঘোষণা থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত। আমাদের আলোচনার পরিধিটা এটুকু ছিল। বাকিটুকু নিয়ে আমাদের আলোচনার এই মুহূর্তে সুযোগ নাই। আমি তাদের ভেতরে উদ্বেগ দেখিনি বরং এটা দেখেছি যে তারা একটা ভালো ইলেকশনের করার মতো পরিবেশ আছে, তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবশ্যই নির্বাচন করার মতন পরিবেশ আছে এবং সেটাই আরো আরো সংহত করার জন্যই আজকের আলোচনা এবং এটা চলমান থাকবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা মূলত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পাঁচ দিনের জন্য ডেপ্লয়মেন্ট প্রোগ্রাম করা হয়। সেখানে একটা প্রস্তাব এসেছে, এটা যেন আট দিন করা হয়। নির্বাচনের আগে তিনদিন, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তীতে চারদিন। তো আমাদের ইনিশিয়াল প্রোগ্রামিং ছিল ছিল পাঁচ দিন। এখন প্রস্তাবনাটা আসছে আট দিন। এটা আমরা পরীক্ষা করে দেখব।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার নিয়ে ইসি সচিব বলেন, এআই-এর অপব্যবহারের ক্ষেত্রে এনটিএমসি যে ব্যবস্থাটা নিয়েছিল পূজার সময়, ৩৫ হাজারের বেশি; পূজা মন্ডপে ওনারা তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারটা করেছেন। ওটা একটা সাকসেসফুল ইভেন্ট ছিল। সেটা আমরা ব্যবহার করতে পারি কিনা সে আলোচনা হয়েছে। আমাদের মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এ ব্যাপারে একটা সেমিনার আছে। সেটাতে আমরা আরো কিছু তথ্য সমাবেশ করে এই জিনিসটা দেখব।
ভোটে হেলিকপ্টার ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, আর্মি এভিয়েশন, এয়ারফোর্স এভিয়েশন চপারে করে নির্বাচন সামগ্রী পরিবহনের ব্যবস্থা করবে। এক্ষেত্রে সমস্ত হ্যালিপ্যাডগুলো প্রস্তুত রখার আলোচনা হয়েছে।
আখতার আহমেদ আরো বলেন, আমরা বলেছি যে তারা যে অবস্থানে যার অবস্থানে আছেন, এইটা যেটা আমরা এম্ফাসাইজ করেছি, যে ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং। প্রত্যেকটা অর্গানাইজেশনে তাদের কিছু নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স তারা কালেক্ট করে। কিন্তু ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিংটা হবে, করলে জিনিসটা আরো সুসংগত হবে। কেননা কোনো একটা অর্গানাইজেশন হয়তো এক জায়গায় একজন হয়তো একটা জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেছেন, আরেকজন করেছেন তিনটা জায়গা। তো এটা সমন্বয় করলে বেটার হবে। এই কোঅর্ডিনেশনের ডিফারেন্ট লেভেলগুলোন যেন ডিটারমাইন থাকে ক্লিয়ারলি। সেটার সাথে কমান্ড স্ট্রাকচারটা যে কে দায়িত্ব নিয়ে কথাটা বলবেন, একেক জায়গায় একেক রকমের পরিস্থিতি হতে পারে, যেমন কোস্টাল এরিয়াতে যে কমান্ড স্ট্রাকচারটা হবে, সেটা বর্ডার এরিয়াতে হবে না। এরকম জায়গাগুলো নিয়ে আরেকটু ফার্নিশ করতে হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি লেফট্যানেন্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, বিমানবাহিনীর প্রধানের প্রতিনিধি এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, নৌবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এসএম কামরুল হাসান, এ নএস আ ই-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ, ডি জিএ ফআ ই-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ভিডিপি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, র্যাব’র মহাপরিচালক একেএ মশহিদুর রহমান, এসবির অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন ও অর্থ) জিএম আজিজুর রহমান এবং সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. ছিবগাত উল্ল্যাহও বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে ইসি সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রায় তিন ঘণ্টার ধরে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর