
বিয়ের আগে অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, আমি সঠিক মানুষকে বিয়ে করছি কি না? অথবা সঠিক মানুষকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে বাছাই করতে পারছি কি না? ইসলামের দৃষ্টিতে এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে হলে ফিরে তাকাতে হবে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সর্বোত্তম আদর্শ ও দাম্পত্য জীবনের দিকে।
তিনি ভালোবাসায় পূর্ণ, বিনয়ী, দয়ালু, বিশ্বস্ত, সহানুভূতিশীল ও উদার স্বামী ছিলেন। মানব ইতিহাসে তার চেয়ে নিখুঁত দাম্পত্য উদাহরণ আর কারো ক্ষেত্রে নেই। তাই প্রত্যেক মুসলিম নারীর জন্য দাম্পত্য জীবনকে আদর্শ হিসেবে নেওয়া উচিত।
পুরুষদের জন্যও নবীজির হাদিসে রয়েছে যথেষ্ট দিকনির্দেশনা। হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘নারীদের চারটি গুণ দেখে বিয়ে করো : তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার রূপ-সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। তবে তুমি দ্বীনদারীকে প্রাধান্য দেবে। নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৯০)
এই দিকনির্দেশনা সঠিক জীবনসঙ্গী বেছে নিতে সহায়ক হবে। নিচে এমন চারটি গুণ ও লক্ষণ তুলে ধরা হলো, তার মাধ্যমে আপনি সহজে জানতে ও বুঝতে পারবেন যে, আপনি সঠিক মানুষটিকে বিয়ে করছেন কি না।
১. অন্যের প্রতি দয়া ও সহানুভূতি আছে কি না দেখুন
প্রথম সাক্ষাতে হয়তো আকর্ষণ তৈরি হতে পারে, কিন্তু সেটিকে ভালোবাসা ভেবে ভুল করা ঠিক নয়। ভালোবাসা গড়ে তুলতে হয় সময়, মমতা ও যত্নের মাধ্যমে। এসবের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা ভালোবাসা টিকে থাকে দীর্ঘদিন।
যিনি নিজের চেয়ে অন্যের কথা ভাবতে পারেন, সহানুভূতি দেখান এবং অন্যের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ান, তিনি প্রকৃত অর্থে জীবনসঙ্গী হওয়ার যোগ্য।
তার কথাবার্তা, আচরণ ও অন্যদের প্রতি ব্যবহার লক্ষ্য করুন। তিনি কি নিজকেন্দ্রিক নাকি অন্যের কষ্ট অনুভব করতে পারেন? এসব সূক্ষ্ম বিষয় থেকেই বোঝা যায়, মানুষটি সত্যিই যত্নশীল কি না।
২. লক্ষ্য, স্বপ্ন, গন্তব্যের মিল আছে কি না
বিয়ের আগে নিজেকে ভালোভাবে জানুন, তারপর দেখুন আপনাদের জীবনের লক্ষ্য ও স্বপ্ন এক কি না। আপনারা কি একই মূল্যবোধ, আদর্শ ও স্বপ্নের পথে আগাচ্ছেন কি না।
যদি দুজনের জীবনের গন্তব্য আলাদা হয়, তবে সম্পর্ক টিকার সম্ভবনা কম। এমনকি যদি কেউ বলে, তুমি যেদিকে যাবে, আমিও সেদিকে, তবুও সতর্ক থাকুন। লক্ষ্যহীন মানুষ পরিণত সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে জটিলতা বৃদ্ধি পায়।
বিয়ের আগেই সন্তান, পরিবার, জীবনধারা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা জরুরি। একে অপরের উদ্দেশ্য বুঝে না নিলে পরে আফসোস করার সুযোগই বেশি থাকে।
৩. দাম্পত্য সঙ্গী সম্পর্কে সঠিক ধারণা
প্রত্যেক মানুষেরই ভালো-মন্দ দু’দিক আছে। কিন্তু অনেকেই বিয়ে করেন অবাস্তব প্রত্যাশা নিয়ে, ভাবেন, সবকিছু নিখুঁত হবে।
এই অতিরিক্ত প্রত্যাশাই অনেক সময় বিচ্ছেদের মূল কারণ হয়। মেনে নিতে হবে, কেউই নিখুঁত নয়। একজন মানুষের যে পরিমাণ গুণাবলি থাকে, ঠিক সেই পরিমাণ না হলেও অনেক বা অল্প কিছু হলেও ত্রুটি থাকবে। বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে এগোতে পারলেই সম্পর্ক টিকে থাকে।
নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, আপনার কাছে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ? গভীর মানসিক সম্পর্ক, নাকি সাজানো-গুছানো ঘর? দায়িত্বশীলতা, নাকি রোমাঞ্চপ্রিয়তা?
সব কিছু একসঙ্গে পাওয়া যায় না। কোথায় আপস করবেন, সেটি বুঝে নিতে হবে।
৪. বাহ্যিক ও শারীরিক সৌন্দর্যে গুরুত্ব দিন, তবে সীমিত পরিসরে
চেহারা ও সৌন্দর্য সম্পর্কের প্রধান বিষয় নয়, তবে একে পুরোপুরি অগ্রাহ্যও করা যায় না। যে আপনার প্রতি আকর্ষণ তৈরি করতে পারে, তার প্রতি টান থাকা স্বাভাবিক। তবে মনে রাখবেন, শারীরিক আকর্ষণ কেবল কেকের ওপর আইসিং, মূল উপাদান নয়।
ভালো সম্পর্কের ভিত্তি হলো পারস্পরিক সম্মান, শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও ভালোবাসা।
বিয়ে ও দাম্পত্য জীবনে সাফল্য পেতে হলে নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝে নিতে হবে। মানুষ যেমন ত্রুটিপূর্ণ, সম্পর্কও তেমনই। কোনো কিছুই নিখুঁত নয়, কিন্তু যথেষ্ট ভালো সম্পর্কই জীবনে শান্তি আনে।
নিজে যেমন অপরিপূর্ণ, তেমনি অন্যের অপূর্ণতাও মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। যে মানুষ নিজেকে নিখুঁত ভাবে, সেও অন্যের কাছ থেকে অসম্ভব প্রত্যাশা করে বসে, আর সেখানেই সম্পর্কের ভাঙন শুরু হয়।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর