• ঢাকা
  • ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১২ সেকেন্ড পূর্বে
মোঃ এস হোসেন আকাশ
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৯:৪৮ রাত

গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতি ফুটে উঠেছে কিশোরগঞ্জে প্রগতি সংঘের শ্যামাপূজায়

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

মণ্ডপে ঢুকতেই চোখে পড়ে থরে থরে সাজানো গাজার ভাগ্যাহত শিশুদের মুখ। কারো মুখে ভয়, কারো চোখে বিস্ময়, কারো হাতে শূন্য থালা, কেউবা ক্ষুধায় ক্লান্ত, বিষণ্ন।

ধ্বংসস্তূপের ভেতর এসব শিশুর হারিয়ে যাওয়া শৈশব যেন ফিরে এসেছে চারপাশে। আলোর ঝলকে, ঢাকের তালে উৎসবেও মূর্ত গাজার নির্মমতা। এই বিষাদই যেন ফুটে উঠেছে কিশোরগঞ্জের শ্যামাপূজায় এক কালী মণ্ডপে।

কিশোরগঞ্জ শহরের বত্রিশ এলাকায় প্রগতি সংঘ তাদের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে একটি বিশেষ শ্যামাপূজার আয়োজন করেছে। এবারের পূজায় বিশ্বের আলোচিত ও মানবিক ইস্যু গাজার যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিস্থিতিকে থিম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। গত সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে শ্যামাপূজার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে থিমটির উন্মোচন করা হয়।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ধর্মীয় নিয়ম অনুযায়ী পূজার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ হলেও থিমভিত্তিক আয়োজনটি আরো দুই দিন চলমান থাকবে।

আয়োজকরা জানান, গাজার শিশুদের কান্না, ধ্বংসস্তূপের মর্মন্তুদ চিত্র এবং মানবতার আর্তি-এসব বিষয় তুলে ধরাই ছিল তাদের এবারের থিমের মূল উদ্দেশ্য।

প্রগতি সংঘের পূজা আয়োজক কমিটির সভাপতি রবীন সাহা বলেন, ‘আমাদের শ্যামাপূজায় এবারের থিম-দুঃখরূপং। যার অর্থ দুঃখের স্বরূপ।

তিনি বলেন, বিশ্বে যা শুরু হয়েছে একদেশ আরেক দেশের সাথে যুদ্ধ। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। আর সবচেয়ে করুণ দৃষ্টিতে দেখা গেলে গাঁজা ফিলিস্তিনের শিশুরা একদম করুন অবস্থা। খেতে না পেরে শিশুরা কত কষ্ট করছে, শিশুরা তো কোন ধর্ম বুঝে না , আর এই পৃথিবীটাই শিশুদের।

তিনি আরো বলেন, আমাদের এই থীমের বিষয়টা মানুষ পজিটিভ নিয়েছে, কোনো নেগেটিভ নেয় নাই। এখানে আমরা একদম সাদা মনে এগুলো করেছি, এখানে আমরা কোনো ধর্ম ব্যবহার করি নাই। সবাই আমাদেরকে সাপোর্ট করতেছে, শুধু কিশোরগঞ্জ নয় এখন সারা বাংলাদেশ আমাদেরকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। আপনাদের মাধ্যমে আমাদের প্রগতি সংঘের সুনাম হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, এসব যোদ্ধা গুলো বন্ধ করতে হবে। শিশুদের নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করতে হবে এবং প্রত্যেকটা মাটির কনাই শিশুদের অধিকার আছে এটা বাংলাদেশ হোক বা যেকোনো বহির্বিশ্ব হোক।

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতি বছরই সমাজের নানান দিক নিয়ে থীম তৈরি করি। আমরা আমাদের কমিটির সবাইকে নিয়ে প্রতি বছরই আমরা একটা প্লেন করি কিভাবে কি থীম আয়োজন করবো। এবার আমরা গাঁজা আর ফিলিস্তিনের শিশুদেরকে নিয়ে থীম তৈরি করেছি। এটাই আমাদের এবারের মূল লক্ষ ছিলো। এদেশের শিশুদের দিকে থাকালে চোখ দিয়ে এমনিতেই অঝোরে কান্না চলে আসে।

তিনি আরো বলেন, আমরা চেয়েছি উৎসবের আনন্দে একটু থেমে মানুষ ভাবুক মানবতার কথা। মা কালী যেমন অন্ধকার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, তেমনি আমরা দাঁড়াতে চেয়েছি যুদ্ধের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আমরা চাই পৃথিবীটা শিশুদের জন্য নিরাপদ হোক। মায়ের কাছে এই প্রার্থণা নিয়ে ভাগ্যাহত শিশুদের হাজির করেছি মায়ের সামনে।’ আমরা আগামীতেও ভালো কিছু করার চিন্তা আছে। আলোয় মোড়া উৎসব, তবু কোথাও যেন বিষাদের ছায়া।

দর্শনার্থীদের চোখে মিশে গেছে বিস্ময় আর বেদনা। কেউ নীরবে ফুল দিচ্ছেন গাজার শিশুদের ছবির সামনে, কেউ আবার মোবাইল ক্যামেরায় বন্দি করছেন মণ্ডপের দৃশ্য। পূজার মণ্ডপ যেন হয়ে উঠেছে এক প্রতিবাদের কণ্ঠ, মানবতার পাঠশালা। শুধু হিন্দু নয়, সব সম্প্রদায়ের লোকজন ভিড় করছে এই কালীপূজায়।

সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা গেছে দর্শনার্থীর ভিড়। সপরিবারে পূজা দেখতে এসেছেন নগুয়া এলাকার শিক্ষক আলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘তরুণদের এমন উদ্যোগ মনে করিয়ে দিচ্ছে, শেষ হয়ে যায়নি আশা, মানবতা ঘুরে দাঁড়াবে। আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। এ ধরনের উদ্যোগ ছড়িয়ে পড়ুক। ’

প্রগতি সংঘের তরুণ সদস্য সহ আপ্যায়ন সম্পাদক অপূর্ব বণিক বলেন, ‘এই আয়োজন শুধু শিল্প নয়, এটা প্রতিবাদও। আমরা বলতে চেয়েছি, আনন্দ তখনই পূর্ণ হয়, যখন তাতে থাকে মানবতার ছোঁয়া।’ তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের পৃথিবীর যে পরিস্থিতি যেমন ফিলিস্তিন গাজাবাসীদের কত যে বাচ্চারা আছে দুঃখ আর অনাহারে আছে মানে ক্ষুধার্ত তাদেরকে নিয়েই মূলত আমরা কাজ করেছি এই থীমে।

আমরা চাই মায়ের কৃপায় পুরো পৃথিবীতে শান্তি ফিরে আসোক। আমাদের মূল থীমের কারণ হচ্ছে এটাই। তিনি আরো বলেন, মুসলিম কিছু না আমরা মূল হচ্ছি মানুষ। ধর্ম বিষয় না। আমরা চেয়েছি ভিন্ন কিছু করার জন্য, যা কেউ করে নাই তা আমরা করে দেখিয়েছি সবার আশীর্বাদে। এই বিষয়টা সবার চোখে ভালো দেখাচ্ছে এবং সবাই আসছে ছবি তুলছে।

দর্শনার্থীদের চোখেও মমতাভরা মিশ্র অনুভূতি। কেউ মূর্তির সামনে প্রার্থনা করছেন শিশুদের জন্য, কেউ আবার নীরবে তাকিয়ে আছেন ছবিগুলোর দিকে।

দর্শনার্থী মৌমা দে বলেন, ‘এমন থিমে পূজা আগে দেখিনি। গাজার শিশুদের মুখ দেখে বুকটা ভার হয়ে আসে, জল চলে আসে চোখে। ছবিগুলোর দিকে তাকাতে কষ্ট হয়। পূজার মধ্যেও এভাবে মানবতার কথা বলা সত্যিই প্রশংসনীয়।’

আরেক দর্শনার্থী বিশাখা ঘোষ বলেন, ‘এই পূজা শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটা আমাদের বিবেকেরও উৎসব। যারা এমন ভাবতে পারে, তারা সমাজে আলো ছড়ায়।’

কালীপূজার এই আয়োজন দর্শনার্থীদের দিয়েছে এক অনন্য মানবতার বার্তা। তাদের অনেকে আয়োজকদের সংবেদনশীলতার প্রশংসা করেছেন।

মুনতাসির/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]