দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার যেখানে তামাক নিয়ন্ত্রণে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের প্রমাণ রেখে চলেছে, ঠিক সেখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) নতুন নেশাপণ্য নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনের অনুমোদন প্রদান করেছে। যা দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন করে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা তৈরি করছে। নিকোটিন পাউচ তৈরির নতুন এই কারখানা স্থাপনের অনুমতি সংবিধান, আপিল বিভাগের রায় এবং সরকারের জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে প্রচেষ্টার সঙ্গে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট অবিলম্বে এ ধরনের জনস্বাস্থ্য বিরোধী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সকল পণ্য নিষিদ্ধের রাষ্ট্রকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। সংবিধান এবং সুপ্রিম কোর্টের আদেশ পালন করা দেশের প্রতিটি সংস্থার দায়িত্ব ও কর্তব্য। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ "ভয়েস অব ডিসকভারি" মামলায় দেশে যৌক্তিক সময়ে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে নির্দেশনা প্রদান করে। একই রায়ে দেশে নতুন তামাক কোম্পানিকে লাইসেন্স না দেওয়া এবং বিদ্যমান তামাক কোম্পানিগুলোকে এই ব্যবসা থেকে সরিয়ে অন্য ব্যবসায় স্থানান্তরিত করার ক্ষেত্রে সহযোগিতার নির্দেশনা প্রদান করেছে।
ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর আর্টিকেল ৫.৩ প্রতিপালনে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে নৈতিকভাবে অঙ্গীকারবদ্ধ। তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি শক্তিশালী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের ৩৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগ অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সব নীতিতে স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেওয়ার প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে।
এমতাবস্থায়, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনে অনুমোদন, দেশের তরুণ তথা আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকির মুখে ফেলবে। যে দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না। নিকোটিন পাউচ মূলত তরুণ প্রজন্মের জন্য আসক্তি তৈরির নতুন এক বাণিজ্যিক কৌশল। যার মাধ্যমে তামাক কোম্পানি ধূমপান ত্যাগের মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে প্রকৃত স্বাস্থ্যক্ষতির বিষয়টি আড়াল করে তরুণ প্রজন্মকে দীর্ঘমেয়াদে ভোক্তা তৈরি করতে চায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে বেলজিয়াম, রাশিয়া, উজবেকিস্তান, ফ্রান্সসহ বিশ্বের ৩৪টি দেশ ইতোমধ্যে এই নিকোটিন পাউচ বিক্রি নিষিদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, জনস্বাস্থ্য বিরোধী নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, সকল সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য WHO FCTC Article 5.3 অনুযায়ী আচরণবিধি প্রণয়ন এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি শক্তিশালী করার আহ্বান জানাচ্ছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর