২২ দিন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও নদীতে নামার অপেক্ষায় উপকূলের হাজারো জেলেরা। তবে আশার সঙ্গে আছে হতাশাও।
কারণ, ট্রলিং ট্রলারের দৌরাত্ম্যে এবার ইলিশ কম মিলবে। তবু নতুন আশার আলো হাতে নৌজাল। দীর্ঘ বিরতির পর আবার জীবিকার নৌকা ভাসানোর শেষ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত জেলেরা।
মেঘনা, বিষখালী আর বলেশ্বরের তীরে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্য। নদীতে মাছ ধরার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞায় থেমে ছিল জেলেদের জীবিকা। এখন সেই নদীতেই আবার নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন হাজারো জেলে। কেউ নতুন জাল তৈরি, কেউ পুরানো জাল মেরামত, কেউ ট্রলার মেরামত করছেঅ আবার অনেকে ট্রলারে নিচ্ছে বরফ। সকল আয়োজন গুছিয়ে রাখছে, শুধু নদীতে নামার অপেক্ষা।
গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর রাত পর্যন্ত মা ইলিশ সংরক্ষণে নদীতে মাছ ধরা, বিক্রি ও পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এই সময়টায় মাছ ধরতে না পারায় কর্মহীন হয়ে পড়েছিল হাজারো জেলে পরিবার। অন্ধকার কাটিয়ে আলোর মুখ দেখার অপেক্ষায় জেলে পল্লীতে। তবে জেলেদের দাবি, ভিজিএফ কর্মসূচির মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হলেও পর্যাপ্ত সহায়তা পাননি। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে ইলিশের প্রাচুর্য মিলবে—এমন প্রত্যাশায় দিন গুনছেন সবাই।
পোটকাখালী গ্রামের জেলে মো. মোবারক আলী বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় কষ্ট হইছে, তবে মা ইলিশ বাঁচলে আমাদেরই লাভ। এখন আশা করি নদীতে আবার ইলিশ পাব। চাল পাইছি, তবে তা দিয়ে সংসার চলে না। এখন শুধু নদীতেই ভরসা। ট্রলার মেরামত করে নতুন জাল নিয়ে যাবে নদীতে।
পাথরঘাটার জেলে মাসুম বলেন, মোরা নিষেধাজ্ঞা তো মানি, কিন্তু ট্রলার বন্ধ না করলে লাভ কি, ট্রলিং দিয়া মাছ মারে আর মোরা খালি হাতে ফিরি। এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে নদীতে আর ইলিশ থাকবেই না। নিষেধাজ্ঞা শেষে পর্যাপ্ত মাছ মিললে তারা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
তবে ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকলে বিপাকে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে জেলেদের। রহিম মাঝি বলেন, এতোদিন পর নদীতে নামব, মাছ ধরা পড়লে ঋণ শোধ করতে পারব। নদীতে গিয়া মাছ দেখলে মোরা কষ্ট ভুইলা যাই, নতুন জাল কিনে প্রস্তুত করছি, ইলিশ ধরা পড়লে ২২ দিনের খরচ ও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারব।
মোরা এহন নৌকা মেরামত ও জাল ঠিকঠাক করতে ব্যস্ত সময় পার করছি। তবে জেলেদের অভিযোগ, ট্রলিং ট্রলার বন্ধ না হলে ইলিশ আর জেলের জালে আসবে না, আবারও হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হবে হয়তো। জেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়েছে।
আইন ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি, জেলেরা নদীর রুপালি ইলিশ পাবে। গভীর সমুদ্র যে ট্রলিং ট্রলার চলে তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইলিশ রক্ষায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর