নির্বাচনের আগে দেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংঘাতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, “সবাই সংঘাতের জন্য মুখিয়ে আছে এবং আপনারা অবশ্যই এটা অল্প কয়েক মাসের মধ্যে দেখতে পাবেন।”
শনিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বিএম ভবনে অনুষ্ঠিত ‘মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন তিনি। সংলাপটির আয়োজন করে সুফি সম্প্রদায় নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান ‘মাকাম’।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “আমি আশঙ্কা করছি, যদি রাজনৈতিক উত্তেজনার সঙ্গে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ যুক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
তিনি জানান, আওয়ামী লীগ ‘দরবারগুলোর’ সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করছে বলে তিনি শুনেছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে— অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে বার্তা দেওয়া যে তারা “মাজার ভেঙে দিচ্ছে বা মসজিদ থেকে লোকজনকে বের করে দিচ্ছে।”
মাহফুজ আলম বলেন, “এই প্রশ্নটা অন্তর্বর্তী সরকারের ইস্যু নয়; এটা ৫০ বছর ধরে চলছে। যখনই সরকার বদলায়, মসজিদ কমিটি বদলায়, ইসলামী ফাউন্ডেশনের গভর্নিং কমিটিও বদলায়। এই প্রথাগত রাজনৈতিক প্রভাবের চক্র থেকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদ হয়তো শেষ হয়েছে, কিন্তু সামাজিক ফ্যাসিবাদ রয়ে গেছে। দেশে ইসলামের বিভিন্ন ধারার মধ্যে যদি সংলাপ ও সংযোগের সুযোগ তৈরি না হয়, রাষ্ট্র আরও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে।”
তথ্য উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, দেশে ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ মুসলমানের মধ্যে বিভিন্ন তরিকা বা ধারার অনুসারী রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা কখনো তাদের মধ্যে সমন্বয়ের কথা ভাবেননি; বরং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
তিনি বলেন, “গত ১৫ বছরে সুফি ধারার সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। আওয়ামী লীগ তাদের সুরক্ষা দেবে, আর তারা আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে—এই বোঝাপড়াতেই ধর্মীয় রাজনীতির পরিসর সীমাবদ্ধ ছিল। কওমিরাও এর বাইরে নয়, তারাও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে ব্যবহৃত হয়েছে।”
মাহফুজ আলম বলেন, “দেশে কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের দূতাবাসের সঙ্গেও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ রয়েছে। কেউ কেউ চায় মাজার ধ্বংস হোক। এখানে রাজনৈতিক ও আদর্শিক প্রভাবও কাজ করছে।”
তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ধর্মীয় জনগোষ্ঠী লড়াই করবে, মব করবে—এই ভয় না পেয়ে রাষ্ট্রকে নীতিনির্ধারণী জায়গা থেকে সংকটের সমাধান খুঁজতে হবে। না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে।”
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
জাতীয় এর সর্বশেষ খবর