• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ মিনিট পূর্বে
জিহাদ রানা
বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:০৫ বিকাল

ঢেউয়ের মতো ভেসে চলে মান্তাদের জীবন

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

স্রোতের তালে দুলছে সারিবদ্ধভাবে পাশাপাশি নোঙর করা কয়েকটি মান্তা নৌকা। এসব নৌকায় বসবাস করে মান্তা সম্প্রদায়ের নর নারীরা। এই দৃশ্যের দেখা মেলে বরিশাল সদর উপজেলার টুঙ্গীবাড়ীয়া ইউনিয়নের লাহারহাট, চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর, চরকাউয়া চরবাড়িয়া ও শায়েস্তাবাদ এলাকায় নদীর পাড়ে।

মান্তারা প্রজন্মের প্রজন্ম ধরে সম্পূর্ণভাবে নদীর পানিতে জীবনযাপন করে আসছে। তাদের মূল পেশা মৎস্য শিকার তবে ভিন্নতা হচ্ছে এই সম্প্রদায়ের নারীই বেশি মাছ ধরার সাথে জড়িত। মান্তা সম্প্রদায়ের স্বাস্থ্য সেবা নেই বললেই চলে। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। পয়ঃনিষ্কাশন বা স্যানিটেশন বলতে কিছুই নেই তাদের। এদের শিশুরা পড়াশুনার কোন সুযোগ পায়না। এক নদীরপাড় থেকে অন্য প্রান্তে অবস্থান করার কারনে তাদের শিশুরা শিক্ষার সুযোগ পায়না।

এমন কি ভবিষ্যত নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই। শুধু তাই নয়, তাদের নেই ভুমি, নেই জাতীয় পরিচয়পত্র, বয়স্ক ভাতা, বিধবাভাতা সহ সরকারি কোন ধরনের সুযোগ ও সুবিধা। তাদের কাছে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় যে সকল তথ্য থাকা দরকারতা ও তারা জানেনা। এই সকল তথ্য ও সেবা কোথায় কিভাবে পাওয়া যায় সেটা জানার প্রয়োজন থাকা সত্তে ও তারা তা পায়না। নৌকাতেই জন্ম গ্রহন করেছে, বেড়ে উঠেছেও এই নৌকাতে। পড়াশোনার সুযোগ ছিলনা। কোন সময় কেউ যদি অসুস্থ্য হয়তাদের নিয়ে শহরে হাসপাতালে যাতে হয়।

তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে এনহ্যান্সিং ইনফরমেশন অ্যান্ড ইনক্লুশন অব ফিশার ফোক উইমেন প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি উন্নয়নসংস্থা চন্দ্রদ্বীপ, রিপোর্ট একাত্তর ও সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা। মান্তাদের নৌকায় এমন পরিবার রয়েছে, যাদের পুরো জীবনই কেটেছে নৌকায়।

এই বহরে যারা থাকেন মধ্যে মাত্র দুজন পুরুষ— আইয়ুব আলী এবং দুলাল সরদারই টাকা গুনতে পারেন। নারীরা টাকা গুনতে পারেন না।সম্প্রতি লাহারহাটে অন্তত দুই মান্তা শিশু নদীতে ডুবে মারা গেছে। জানাচ্ছিলেন নৌবহরের নেতা জসীম সরদার।‘আগে কেউ মারা গেলে আমরা লাশ পানিতে ভাসিয়ে দিতাম,’ বলছিলেন ৬০ বছর বয়সী কদমজান বিবি। তিনি বলেন, ‘এখন চেয়ারম্যান অনুমতি দিলে আমরা স্থলে কবর দিই। আমরা পানির ওপরই জন্মাই, পানির ওপরই মরে যাই — এটাই আমাদের নিয়তি।’ চরবাড়িয়ার মানতা নারী জোসনা বেগমবলেন, জন্মের পর থেকেই দেহি পানি আর পানি। তাই নদীকে আপন হরে নিছি। জন্ম মৃত্যু বিবাহসবই এই নদীতে। মাছ ধরে সংসার চালাই। কিন্তু মোগো জেলের স্বীকৃতিও দেয় নাই।

মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলে, নাখাইয়া থাকি, কোন সুযোগ সুবিধা পাইনা। মোগো সাহায্য করলে ভালো অয়। বুখাই নগরের মরিয়ম বেগম বলেন, বাবামাকে দেখে দেখছি মাছ দরিয়া জীবন চালাইতে। মোরাও একইভাবে চলতে আছি। রৌদবৃষ্টি ঝড় বৈন্যা মোগো দ্বারে কিছুইনা। একদিন মাছ না ধরলে না খাইয়া থাকতে হয়। লাহারহাটের মানতা সম্প্রদায়ের দুলাল, খোকন, জসিম সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, তিন পুরুষধরে এই মানতা সম্প্রদায়টি এখানে বসবাস করছে। মাছধরা সহ বিভিন্ন পেশার সাথে যুক্ত সম্প্রদায়টি। তবে আগের মত নদীতে মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে মাছ ধরায় বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আসে। ওই সময়তাদের পরিবারনা খেয়ে থাকে। সরকারি কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাননা। তাদের সন্তানরা পাচ্ছেন না শিক্ষার আলো।

মানতাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠক রিপোর্ট একাত্তরের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান পান্থ বলেন, “আমরা বরিশাল সদরে ৬ শতাধিক মানতা নারীদের নিয়ে কাজ করছি। নারী মৎস্যজীবি বিশেষভাবে মান্থানারীদের তথ্য সমৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তি প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধি ও সুবিধাগুলো পাওয়ার বিষয়ে অর্ন্তভূক্তি করার চেষ্টা করছি। বরিশাল সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আজহারুল ইসলাম বলেন, মান্তা সম্প্রদায় থেকে কোনো সরকারি খাস জমির জন্য আবেদন তিনি পাননি।বরিশালের সচেতন নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক গাজী জাহিদ হোসেন বলেন, ‘শিক্ষা, পরিচয়পত্র বা সরকারি সহায়তার অভাবে মান্তা সম্প্রদায় দেশের সবচেয়ে উপেক্ষিত ও অদৃশ্য গোষ্ঠীর মধ্যে একটি। তিনি আরও বলেন, ‘মান্তাদের নেই জমি, নেই স্কুল, নেই হাসপাতাল, নেই কোনো স্বীকৃতি। তারা নদীর মানুষ। নদীর পানিতে নৌকায় তাদের জন্ম, সেখানেই তারা বেঁচে থাকেন, সেখানেই তারা মারা যান। তাদের দিকে কারো মনযোগ নেই।’ এ ব্যাপারে বরিশালের জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে (মানতাসম্প্রদায়) নিয়ে সরকার কাজ করছেন। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনের সাথে মানতা সম্প্রদায়ের নাগরিকত্বের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদেরকে জেলের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এবং রাষ্ট্রের সকল সুযোগ সুবিধা যাতে পেতেপারে সেটি নিশ্চিত করা হবে।’

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]