ইলিশ শিকারে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বুক ভরা আশা নিয়ে জীবনবাজি রেখে ইলিশ শিকারের জন্য সমুদ্রের দিকে যাত্রা করেছেন জেলেরা। শনিবার রাত ১২টার পর থেকে সাগরগামী ট্রলারগুলো যাত্রা শুরু করেছেন। তাদের চোখে একদিকে জীবিকার আশাবাদ, অন্যদিকে গভীর উদ্বেগ ও ঋণের বোঝা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমুদ্র জীবিকার ব্যয় বাড়লেও আয় তুলনামূলকভাবে কমে যাওয়ায় অধিকাংশ জেলেই এখন দারিদ্র্য ও ঋণের ফাঁদে জড়িয়ে পড়েছেন। এভাবেই এক অনন্ত ঋণচক্রে বন্দি হয়ে পড়ছেন জেলেরা।
গত ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে জেলেরা নতুন করে ঋণ নেন। কেউ এনজিও থেকে ও কেউ মহাজনের কাছ থেকে আগাম টাকা ধার করে। সেই টাকার বদলে তারা বাধ্য হন নির্দিষ্ট দামে মাছ বিক্রি করতে।
জেলেরা বলছেন, একেক জেলে পুরো মৌসুম শেষে হাতে যে টাকা পায়৷ সেই টাকায় ঋণের বোঝা থেকে মুক্তি মেলে না। বিগত কয়েক বছর ধরে নিষেধাজ্ঞা ও দূর্যোগের কবলে পড়েছে জেলেরা। এতে করে বেশিরভাগ সময়ে জেলেরা তীরে থাকার ফলে ঋণ নিয়েই তাদের সংসার চালাতে হয়েছে। আবার অনেকেই ঋণ নিয়ে ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে যাচ্ছেন।
সামরাজ মৎস্যঘাটের নুর মোহাম্মদ বলেন, “প্রতিবার সমুদ্রে যাওয়ার আগে অন্তত কয়েক লাখ টাকা ধার নিতে হয়। জাল মেরামত, বরফ, জ্বালানি তেল ও খাবার সব মিলিয়ে খরচ অনেক। মাছ না পেলে পুরো ঋণ ঘাড়ে পড়ে।” এর মতো হাজারো জেলে একই বাস্তবতার মুখোমুখি।
অহিদ মাঝি জানান, সমুদ্রে ঝড়ের সংখ্যা বেড়েছে, মাছের আবাসস্থল পরিবর্তিত হচ্ছে। ফলে আগের মতো মাছ ধরা যাচ্ছে না। অনেক জেলে ১০-১৫ দিন সমুদ্রে কাটিয়েও তেমন কিছু হাতে পান না। এই অবস্থায় তারা আবার ঋণ নেন, শুধু সংসার চালানোর জন্য।
চরফ্যাশন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল গোলদার জানান, জেলেদের আরেকটি বড় সমস্যা হলো সামাজিক নিরাপত্তার অভাব। ঝড়ে বা দুর্ঘটনায় জেলে মারা গেলে তার পরিবার কার্যত অনিশ্চিত জীবনে পড়ে যায়। সরকার কর্তৃক ঘোষিত ক্ষতিপূরণ বা সহায়তা প্রায়ই দেরিতে আসে বা পৌঁছায় না। ফলে পরিবারটি আবার ঋণ নিয়ে টিকে থাকতে বাধ্য হয়।
উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, এই উপজেলায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলিয়ে জেলের সংখ্যা প্রায় লক্ষাধিক। এদের মধ্যে সরকারি নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ৪৪ হাজার ৩১১ জন। সমুদ্রগামী জেলে রয়েছে ১৭ হাজার ৫৬১জন। সমুদ্রগামী জেলে ট্রলার রয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ টি।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু জানান, আমাদের উপকূলীয় জেলেরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের কাঁধে রয়েছে আর্থিক অনিশ্চয়তা, ঋণের ভার, আর এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের বোঝা। অনেকে উচ্চসুদে মহাজন বা এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল কিনে সমুদ্রে যাচ্ছেন। মাছ না পেলে বা দুর্যোগে ক্ষতি হলে সেই ঋণ তাঁদের জীবনের বোঝায় পরিণত হয়। তবে আমরা উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে জেলেদের পাশে থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর