খাগড়াছড়ির দুর্গম লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়িতে সন্ত্রাসী কার্যক্রম দমনে অস্থায়ী সেনা বেস ক্যাম্প তৈরির উদ্যোগ নেয় খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন লক্ষ্মীছড়ি জোন। আর এতেই নড়েচড়ে বসে পাহাড়ের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ( ইউপিডিএফ প্রসীত) গ্রুপ। সেনা বেস ক্যাম্প নির্মাণ বন্ধ করতে ইতোমধ্যে একটি বৌদ্ধ বিহার এবং স্থানীয় অসহায় জনগণকে ব্যবহার করে বিশৃঙ্খলার আশ্রয় নিয়েছে সংগঠনটি। যার প্রেক্ষিতে কয়েক দফা চেষ্টা করে অবশেষে সেখানে বেস ক্যাম্প না করে অন্যত্র ক্যাম্প স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেনাবাহিনী।
খাগড়াছড়ির বর্মাছড়ি এলাকাটি একটি পাহাড়ি অধ্যুষিত এলাকা এবং নিকটবর্তী স্থানে কোন সেনা ক্যাম্প না থাকার কারণে ইউপিডিএফ দীর্ঘ সময় ধরে সশস্ত্র দলের ক্যাম্পসহ বিভিন্ন পর্যায়ে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে। একই সাথে বর্মাছড়ি এলাকাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে সমতলের যোগসূত্র হবার কারণে দীর্ঘদিন ধরে দেশের অভ্যন্তরে ইউপিডিএফ এর অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। এ প্রেক্ষিতে পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম যে সকল এলাকায় সেনাবাহিনীর ক্যাম্প নেই সে সকল এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করে সেনাবাহিনী।
অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে জেলার লক্ষ্মীছড়ির বর্মাছড়ি এলাকায় ১৮ অক্টোবর তারিখ থেকে সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসাবে সেনাবাহিনীর টহল দল মূল ক্যাম্প হতে দূরবর্তী স্থানে অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে বর্মাছড়ি এলাকা হতে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র দলসমূহকে নির্মূল করার জন্য প্রয়োজনীয় আভিযানিক কার্যক্রম হাতে নেয়।
এ অভিযান চলাকালে সেনা টহল দল সংরক্ষিত বনাঞ্চলের খিরাম অংশের একটি খালি জায়গায় অস্থায়ী পেট্রোল বেস স্থাপন করে। এ স্থানটি বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহার হতে প্রায় ৫০০ মিটার পশ্চিম দিকে অবস্থিত। বর্মাছড়িতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি এবং অভিযানের কারণে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পাড়া থেকে দ্রুত সরে গিয়ে দুর্গম কালাপাহাড় এলাকায় এবং পার্বত্য অঞ্চলের বাহিরে ফটিকছড়ির দুর্গম অঞ্চলে অবস্থান নেয় বলে জানা যায়। সেনা অভিযানে ইইউপিডিএফের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তারা জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে অস্থায়ী সেনা পেট্রোল বেস স্থাপনের বিরুদ্ধে কৌশল হিসেবে এলাকার জনগণ, নারী এবং শিশুদের জোরপূর্বক জমায়েত করে আন্দোলন শুরু করে।
এসময় তারা বনবিভাগের সংরক্ষিত জমিতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেসের স্থানটিকে বর্মাছড়ি আর্য কল্যাণ বিহারের অংশ হিসেবে দাবি করে একই সাথে তারা দেশ এবং বিদেশ হতে ব্যাপক অনলাইন প্রোপাগান্ডা ছড়ায় এবং তাদের আধিপত্য এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ইউপিডিএফ এর নেতৃত্বে ২৪ অক্টোবর তারিখে বর্মাছড়ি অস্থায়ী পেট্রোল বেসের নিকটে আনুমানিক সহস্রাধিক নারী, শিশু ও পুরুষদের জমায়েত করে এবং সেনা সদস্যদের মুখোমুখি দাড় করায় এবং তারা সেনাবাহিনীর সাথে দুর্ব্যবহার করে।
তারা বর্মাছড়িতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেস আর্য কল্যাণ বিহারের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করে এবং সেনাবাহিনী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে কিন্তু তাদের দাবির স্বপক্ষে কোন প্রকার প্রমাণাদি উপস্থাপনে ব্যর্থ হয়।
গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণে আরো জানা যায় যে, ইউপিডিএফ নেতা প্রসীত বিকাশ খীসা সেনাবাহিনীর অভিযানকে বিতর্কিত করে তুলতে ৩০ অক্টোবরের মধ্যে আর্য কল্যান বিহারে নাশকতার উদ্দেশ্যে বড় আকারে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করার নির্দেশ দেয়। এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার পাহাড়ি জনগণকে বিভিন্ন এলাকা থেকে জোরপূর্বক যোগদান করতে বাধ্য করা হবে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের জনৈক অধ্যাপক এবং খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার জ্যোতিমারা বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের একজন ধর্মীয় নেতা উক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সেনাবাহিনীর অভিযানকে বিতর্কিত করতে উপস্থিত থাকার কথা জানা গেছে।
ইউপিডিএফ এর শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ খুবই পরিকল্পিতভাবে দেশের অভ্যন্তরে রাষ্ট্র বিরোধী শক্তি, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক শক্তির পরিকল্পনায় ও আর্থিক সহায়তায় পার্বত্য অঞ্চলকে অশান্ত করে তোলার প্রয়াসে সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রেখেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা সুচিন্তিতভাবে নারী, শিশু এবং যুবক শ্রেণীকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। এ কারণে সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্বকে ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র ক্যাডারদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে অপরিসীম ধৈর্য্য ও বিচক্ষণতা পরিদর্শন করতে হচ্ছে। সেনাবাহিনীর এই সীমাবদ্ধতাকে কাজে লাগিয়ে ইউপিডিএফ এর শীর্ষ নেতৃত্ব পার্বত্য অঞ্চলকে এক অনিবার্য সংঘাতময় অঞ্চলে রূপ দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এই পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য ইউপিডিএফ এর সশস্ত্র ক্যাডার নিজ জাতিগোষ্ঠীর জনগণের উপর গুলি চালিয়ে হত্যা করার মত জঘন্য কার্যক্রমের দায়ভার সেনাবাহিনীর উপর চাপিয়ে সম্পূর্ণ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণ করার জন্য প্রতিনিয়ত অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সার্বিক বিষয়টিকে পরিষ্কার করার গত সোমবার বেসামরিক প্রশাসনের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ের কমান্ডারগণ এবং মিডিয়ার উপস্থিতিতে এলাকাবাসীর নিকট তাদের দাবির স্বপক্ষের প্রমাণাদি দাখিলের আহবান করা হলে তারা তা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়।
লক্ষ্মীছড়ি জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেন, 'পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত কমান্ডার এবং সৈনিকদের বারংবার পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য ইউপিডিএফ এবং অঙ্গ সংগঠন সমূহ পরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন মিথ্যা ও বানোয়াট ইস্যু এবং ঘটনার অবতারণা করছে। সেনাবাহিনী সামগ্রিক বিষয়টি অনুধাবন করে তা অত্যন্ত ধৈর্য্য এবং পেশাদারিত্বের সাথে প্রতিটি ঘটনা মোকাবেলা করে যাচ্ছে।' সেনাবাহিনী বর্মাছড়িতে স্থাপিত অস্থায়ী পেট্রোল বেসটি অন্যত্র স্থানান্তর করছে and সেখান থেকে আরো কঠোরভাবে সেনা অভিযান পরিঢালনা করছে। পার্বত্য অঞ্চলে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর অফিসার ও সৈনিকরা ইউপিডিএফ সহ সকল রাষ্ট্র বিরোধী সংগঠনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে মাতৃভূমির অখন্ডতা রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব দৃঢ়তার সাথে পালন করতে দেশবাসীর নিকট প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।'
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর