সবুজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে টমেটো। থোকায় থোকায় টমেটোর ভারে গাছ যেন নুইয়ে পড়ছে। নড়াইল সদরের তুলারামপুর এলাকায় এমন দৃশ্য এখন চারদিকে। অন্য ফসলের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ঝুঁকছেন এখানকার কৃষকরা।
ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প (ডিএই অংশ) নড়াইল সদর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে পলিশেডে গ্রীষ্মকালীন বারি-৮ জাতের টমেটো চাষ করেছেন ওই এলাকার কৃষকরা।
আধুনিক প্রযুক্তি, অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যার কারণে এ বছর টমেটোর ফলন ভালো হয়েছে। আর সেই সাথে বেড়েছে কৃষকদের আয়ও। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথম বারের মতো গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে খরচ বাদে ভালো লাভ হওয়ায় খুশি চাষিরা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এখন অনেকেই টমেটো চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী বছর আরও বেশি জমিতে টমেটো চাষ হবে বলে আশা করছে কৃষি অফিস।
চাঁচড়া এলাকার টমেটো চাষি কামরুল ইসলাম বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমি এই বছর ২০ শতক জমিতে কৃষি অফিসের দেওয়া প্রশিক্ষণ ও পরামর্শে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছি। এই জমিতে প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশা করছি এই টমেটো বিক্রি করে আমার খরচ বাদে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ হবে।’
একই এলাকার টমেটো চাষি বাহারুল মোল্যা বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আমি একজন কৃষক। আমি অন্য ফসল চাষ করে থাকি। বাজারে দেখি টমেটোর অনেক দাম। বেশি দাম হওয়ায় আমি টমেটো চাষে আগ্রহী হয়ে কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে এবছর গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করেছি। গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি। খরচ বাদে বেশ ভালো লাভ হবে।’
টমেটো চাষি রানা মোল্যা বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘আধুনিক পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের প্রশিক্ষণ নিয়েছি কৃষি অফিস থেকে। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক পরিচর্যার কারণে ফলন ভালো হয়েছে। স্থানীয় বাজারে টমেটোর চাহিদা বেশি হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছি। প্রতি কেজি টমেটো পাইকারি পর্যায়ে ৯০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি করেছি। টমেটো লাভজনক ফসল। আমার জমিতে ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। দাম যদি এমন থাকে আমার এবছর খরচ বাদে ১ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকবে।’
কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় ওই এলাকায় অন্য কৃষকরাও টমেটো চাষে আগ্রহী হয়েছে। আগামী বছরে আরও অনেকেই টমেটো চাষ করবেন বলে অনেকেই জানান।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিব বিশ্বাস বিডি২৪লাইভকে বলেন, ‘এ বছর তুলারামপুর ইউনিয়নে দেড় একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ হয়েছে। টমেটোর বাজার মূল্য খুব বেশি থাকায় কৃষকদের টমেটো চাষে আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ পরামর্শ ও উপকরণসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা আমরা কৃষকদের দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক একর জমিতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে প্রায় তিন লক্ষ টাকার মতো খরচ হয়, সব খরচ বাদে আড়াই থেকে তিন লক্ষ টাকার মতো লাভ করা সম্ভব। টমেটোর বাজার মূল্য বেশি থাকায় কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। নড়াইলে আগামী বছর এই গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।’
গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে এমন সফলতা কৃষকদের মুখে যেমন হাসি ফুটিয়েছে, তেমনি বদলে দিচ্ছে নড়াইলের কৃষি অর্থনীতির চিত্রও।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর