প্রান্তিক পর্যায়ে পাঠদানকারী সহকারী শিক্ষকদের সকল সংগঠন কিছু যৌক্তিক দাবি/সুপারিশ নিয়ে প্রাথমিকের মোট ১১টি শিক্ষক সংগঠন মিলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ-এর পতাকা তলে সমবেত হয়েছেন সহকারী শিক্ষকরা। প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, তিন দফা দাবি ও শিক্ষায় বৈষম্য দূর করার লক্ষে গতকাল ১ নভেম্বর ২০২৫, রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় আব্দুস সালাম হলে এক সংবাদ সম্মেলন করেন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন শাহীনুর আকতার, শাহিনুর আল আমীন, মোঃ মুনির হোসেন, আনিসুর রহমান, তপন কুমার মন্ডল, সাবেরা বেগম, আসমা খানম, মোঃ আব্দুল খালেক, মোঃ মিজানুর রহমান, আনোয়ারুল ইসলাম, মো: মনিরুজ্জামান তোতাসহ সংগঠনের আরো অনেক শিক্ষকবৃন্দ।
সংগঠনগুলো নেতাকর্মীরা লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে জনগনের জন্য কার্যকর সেবা প্রদানের ভাবনা থেকে আমরা মনে করি যে, প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়ন ও বিকাশ হওয়া খুবই জরুরী। এদেশে প্রাথমিক শিক্ষা বুনিয়াদী এবং মৌলিক শিক্ষা। আজকের শিশু আগামীদিনের দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির সোপান। দেশ ও জাতির আগামীর প্রয়োজনেই এদেরকে দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ,দেশ প্রেমিক, দায়িত্বশীল, বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক এবং বিশ্বমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করে গড়ে তোলা জরুরী। আনন্দের সাথে শিখন-শেখানো কার্যক্রম নিশ্চিত করতে বিদ্যালয়ের অনুকূল প্রবেশ,শিক্ষা কারিকুলাম ও শিখন প্রক্রিয়াকে সহজতর ও উন্নত করতে হবে।
কিন্তু আমাদের কাছে শিক্ষাটা এমন দাড়িয়েছে যে, আমরা শিক্ষা বলতে বুঝি একটা হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে কাগজের একটা সনদ অর্জন। যার মাধ্যমে নিজেকে কোন প্রতিষ্ঠানে অর্থ যোগে নিয়োগ করা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাটা হল সসীম,নির্দিষ্টতা আছে,পরিমাপ যোগ্য। কারিকুলামে এমন কিছু বিষয় সংযোজন করা দরকার যেন এই সসীমের মধ্যে অসীমের সন্ধান মেলে। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন স্বশিক্ষার আলোর সন্ধানে ছুটে যায়। এই নির্দিষ্টতা যেন জ্ঞান সমুদ্রে প্রবেশের পথ নির্দেশক হয়। এই জ্ঞান অর্জনের ফল যেন কোন শিক্ষার্থীর আচরণের মৌলিক সমাজ স্বীকৃত বাঞ্চিত পরিবর্তন হয় ।
একজন সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড ১১০০০/- টাকা। সর্বসাকূল্যে একজন শিক্ষক বেতন পান ১৭৬৫০/- টাকা।দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি ও জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সামান্য বেতনে জীবন চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আপনাদের মাধ্যমে আমাদের সামান্য একটি চাওয়া সরকারের কাছে জানাতে চাই। আমাদের অন্যতম প্রধান দাবী সহকারী শিক্ষক এন্ট্রি পদে ১১তম গ্রেডে ১২৫০০/- টাকা স্কেলে সর্বসাকূল্যে বেতন হবে ১৯৮২৫/-টাকা। সরকারের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় রেখেই আমরা এই সামান্য দাবিটি করছি যেখানে সরকারকে অতিরিক্ত মাত্র ২২৬৫/-টাকা প্রদান করতে হবে।
একজন সহকারি শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক ২য় শ্রেণি এবং ১ বছরের একটা ডিপ্লোমা(সি-এন-এড/ডিপিএড/বিপিটি) কোর্স করতে হয়। এই যোগ্যতা নিয়ে অধিকাংশ পেশাজীবি ১০/১১তম গ্রেডে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগদান করেন।এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
প্রাথমিক সহকারি শিক্ষকদের কি অন্যায় যে, তারা একই যোগ্যতা নিয়ে ২/৩টি গ্রেড নীচে বেতন পাবেন? এটাতো শিক্ষাকে ধংস করার সেই আদিম সামন্ত জমিদারি প্রথা নয় কি?
০৮মে পে-স্কেলে মোট গ্রেড ২০টা। কারোর বেতন ৭৮০০০/- টাকা আবার কারোর বেতন ৮২০০/-টাকা। পার্থক্য থাকবে তবে সেটা এতটা হতে পারেনা। কারণ একই দেশে বাজার মূল্যও একই। এটাও মারাত্মক বৈষম্য। ০৯ম পে স্কেলে ১০ অথবা ১২ টি গ্রেড রেখে এই বৈষম্য দূর করতে হবে। এটা এখন সময়ের দাবী। তাই বৈষম্যহীন সরকার প্রধানের নিকট আমাদের দাবী অচিরেই সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন স্কেল প্রদান করে বৈষম্য নিরসন করুন। প্রধান ও সহকারি শিক্ষকদের মধ্যে আর্থিক ও মর্যাদা সমতা স্থাপন পূর্বক কর্মক্ষেত্রে সুন্দর পরিবেশ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের আন্তরিকতার সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মান উন্নয়ন ছাড়া শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা করতে হবে এবং একই সাথে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
আমাদের দাবী সমূহঃ
১/ সহকারী শিক্ষদের এন্ট্রি পদে ১১তম গ্রেড প্রদান করতে হবে।
২/১০ বছর ও ১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড প্রদানের জটিলতা নিরসন।
৩/ শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে দ্রুত পদোন্নতি জটিলতা নিরসন করতে হবে।
যদি ১৫নভেম্বর ২০২৫ইং এর মধ্যে উল্লেখিত দাবী গুলো মেনে না নেওয়া হয় তাহলে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ সারাদেশের সহকারী শিক্ষকদের নিয়ে নিম্নোক্ত কর্মসূচী গুলো পালন করবে-
১/ ২৩ ও ২৪ নভেম্বর ২০২৫ইং অর্ধদিবস কর্মবিরতি।
২/ ২৫ও ২৬ নভেম্বর ২০২৫ইং পূর্ণদিবস কর্মবিরতি।
৩/ ২৭ নভেম্বর ২০২৫ইং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচী
৪/ দাবী আদায়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি/ঘোষণা না এলে পরীক্ষা বর্জন এবং ১১ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচী পালন।
আমরা পূর্বেও আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে কর্মসূচী স্থগিত করি। কিন্তু ১৬অক্টোবর ২০২৫ইং মাননীয় উপদেষ্টা,সচিব ও মাননীয় মহা পরিচালক মহোদয় আমাদেরকে ডেকে নিয়ে ০১মাসের সময় চেয়ে নেন এবং এই সময়ের মধ্যেই আমাদের দাবী বাস্তবায়ন হবে বলে আশ্বস্ত করেন। ইতি মধ্যে ১৫দিন চলে গেলেও আমরা এবিষয়ে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি বা খবর পাচ্ছিনা। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দ্রুত নায্য দাবী গুলো বাস্তবায়ন করবেন বলে আশাবাদী।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর