আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফুর বিরুদ্ধে দলীয় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে একটি রেজুলেশন করা হয়েছে।
শনিবার (২ নভেম্বর) এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। রেজুলেশনে বলা হয়েছে, এই জনপ্রিয় নেতাকে দলের স্বার্থে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা জরুরি। নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফুকে অপরিহার্য মনে করে। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূল নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও ফেসবুকে একই দাবি তোলা হচ্ছে।
ক্লিন ইমেজের অধিকারী এই সাবেক ছাত্রনেতা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে ২০২৪ সালে একা লড়াই করে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে দল থেকে বহিষ্কার করে।
দেশের পটপরিবর্তন হলে সারাদেশের ন্যায় নির্বাচিত হয়েও তিনি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারিত হন। তবুও দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে তিনি হাল ছাড়েননি। তার অনুসারীরা দলীয় সকল কর্মকাণ্ডে সোচ্চার ছিলেন। গত ৩ আগস্ট নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে তিনি অংশ নিতে না পারলেও তার প্রধান প্রতিপক্ষ, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ সুজাত মিয়ার গ্রুপের ‘সুপার ফাইভ’-এর ৫ প্রার্থীকে পরাজিত করে নিজ বলয়ের ৫ জনকে বিজয়ী করে সর্বত্র আলোচনায় আসেন। এই কাউন্সিলে প্রভাব বিস্তার করে তিনি আবারও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু নবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তিনি একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি থেকেই তার বিএনপির রাজনীতিতে যাত্রা শুরু। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে তার অগ্রণী ভূমিকা প্রশংসিত ছিল। বিগত সরকারের আমলে ১৭ বছর তিনি বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের ৬ মাস আগে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি দলীয় পদ হারান।
এর আগে বিগত ১৭ বছরে ১৫টি মামলাসহ একাধিকবার গ্রেফতার ও কারাবরণ করেন। নবীগঞ্জ উপজেলা তৃণমূল বিএনপিকে ঢেলে সাজাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে তিনি মাঠ সরব রাখেন। দীর্ঘদিন ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার পতন আন্দোলনে অগ্রভাগে থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন মুজিবুর শেফু। দলের দুর্দিনে রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরই মধ্যে বিএনপির মধ্যে শুরু হয় গ্রুপিং ও লবিং। একটি বিশাল অংশের নেতৃত্ব দেন তিনি। যার প্রমাণ মিলে বিগত উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে। বহিষ্কৃত হয়েও তার বলয়ের পুরো প্যানেলে ‘সুপার ফাইভ’-এর ৫ জন প্রার্থীকে বিজয়ী করে তিনি বাজিমাত করে চমক সৃষ্টি করেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-কোষাধ্যক্ষ ও আউশকান্দি ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিহাব আহমদ জানান, মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু অত্যন্ত ক্লিন ইমেজের অধিকারী একজন পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ। দুর্নীতির কালো থাবা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। যে কারণে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি এখন গণদাবিতে পরিণত হয়েছে।
আগামী সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে লড়াইয়ে তার বিকল্প নেই। তিনি বিগত উপজেলা বিএনপির কাউন্সিলে দলের বাইরে থেকেও তার বলয়ের ‘সুপার ফাইভ’-এর ৫ জন প্রার্থীকে বিজয়ী করেন, এতেই প্রমাণ হয় দলের মধ্যে তিনি কতটা জনপ্রিয়।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিদুর রহমান মজিদ বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফুর বিরুদ্ধে দলীয় বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে গত শনিবার নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভায় একটি রেজুলেশন করা হয়েছে।
রেজুলেশনে বলা হয়েছে, জনপ্রিয় এই নেতাকে দলের স্বার্থে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা জরুরি। নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফুকে অপরিহার্য মনে করে। তিনি দূরে থেকেও দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলন-সংগ্রামে উৎসাহিত করেছেন। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে মুজিবুর রহমান শেফুর বিকল্প নেই। ইতিমধ্যে তিনি দলীয় নেতাকর্মীসহ মানুষের মন জয় করতে সক্ষমতার স্বাক্ষর রেখেছেন।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি সৈয়দ মতিউর রহমান পেয়ারা বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে মুজিবুর রহমান শেফুর বিকল্প নেই। ফলে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ আমজনতার দাবি, অতি দ্রুত উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মুজিবুর রহমান শেফুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে তাকে দলে ফিরিয়ে আনা হোক।
নবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু বলেন, আমি দলের বিরুদ্ধে কোনোদিন অবস্থান নিইনি। সবসময় দলের পক্ষে কাজ করেছি। ২০২৪ সালের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচনে জনতার চাপে প্রার্থী হলেও দলের কোনো কাজে বিরোধিতা করিনি। দলীয় সব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছি।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর