পরিবারের হাসি-আনন্দ, স্বপ্নভরা যাত্রা- নীল সমুদ্র দেখার আশায় রওনা করেছিলেন সবথেকে কাছের মানুষগুলোকে নিয়ে। রাতের আঁধারে ঢাকা থেকে শুরু হয়েছিল সেই পারিবারিক ভ্রমণ।
কেউ ভাবতেও পারেনি, সেই যাত্রাই হয়ে উঠবে তাদের জীবনের শেষ পথচলা। কক্সবাজারের পথে, এক মুহূর্তেই ভেঙে গেল পাঁচটি জীবন, থেমে গেল পাঁচটি হৃদয়। স্বপ্নভরা গাড়ি পরিণত হলো মৃত্যুর নিস্তব্ধ গন্তব্যে।
এক সংঘর্ষে হারিয়ে গেল মায়ের মমতা, স্ত্রীর হাসি, বোনের স্নেহ আর শ্যালিকার প্রাণচঞ্চলতা। এক পরিবারের আনন্দ ভ্রমণ পরিণত হলো হৃদয়বিদারক মৃত্যুশোকে। হাসপাতালে শয্যাশায়ী উদয় পাটোয়ারী- চোখের সামনে প্রিয়জনদের হারানোর নির্মম বাস্তবতা, বুকের ভেতর অন্তহীন শূন্যতা।
সড়কজুড়ে রয়ে গেল ভাঙা গাড়ির ধ্বংসাবশেষ আর নিথর শরীরের মিছিল- পেছনে রেখে গেছে এক শোকের সাগর, যেখানে ডুবে আছে একটি পুরো পরিবার।
বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চকরিয়ার হাঁসেরদীঘি এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত পাঁচজনই একটি পরিবারের সদস্য। তারা হলেন, মা রুমি বেগম (৬৫), শাশুড়ি রিজওয়ানা মজুমদার শিল্পী (৫৫), স্ত্রী ফারজানা মজুমদার লিজা (২৮), ছোট বোন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ শিক্ষার্থী সাদিয়া পাটোয়ারী (২৩), শ্যালিকা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা মজুমদার (২৪)।
আহতরা হলেন- উদয় পাটোয়ারী (৪৩), তার ছেলে সামাদ পাটোয়ারী, শ্যালক শাহেদ মজুমদার লিশান, মাইক্রোবাস চালক আমিনুল হক।
উদয় পাটোয়ারী মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সে চাকরি করেন এবং পরিবারসহ থাকেন ঢাকার উত্তরা এলাকায়। মঙ্গলবার রাতে তারা মাইক্রোবাসে করে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। পরিবারের আনন্দভ্রমণ যে এভাবে অকাল মৃত্যুর খবরে শেষ হবে, তা কেউ ভাবতেও পারেননি।
চকরিয়ার মালুমঘাট হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মেহেদী হাসান জানান, চট্টগ্রামমুখী মারসা পরিবহনের বাসের সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুইটি গাড়িই দুমড়ে-মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই দুইজন নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।
আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত দুইটি গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
উদয়ের শ্বশুর আবদুল মন্নান মজুমদার বলেন, মঙ্গলবার রাতে সবাই আনন্দে রওনা দিয়েছিল। ভেবেছিলাম কক্সবাজার থেকে হাসিমুখের ছবি পাবো। কিন্তু এখন শোকের সংবাদ ছাড়া আর কিছুই নেই। সব শেষ হয়ে গেল।
পরিবারের স্বপ্নভরা যাত্রা যে এভাবে শেষ হবে, সেই বেদনায় স্তব্ধ হয়ে আছে গ্রাম, আত্মীয়-স্বজন, আর হাসপাতালের করিডোর।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর