• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৫ দুপুর
সাত মাদক কারবারী অভিযুক্ত

গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় খুন হন সাম্য

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যা মামলায় সাত জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিয়েছে মামলার তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ। উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আখতার মোর্শেদ জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এবং এফ রহমান হল ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার অভিযোগে করা মামলায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেছি। চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন— মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ এবং মো. রবিন। এরা সবাই মাদক কারবারী বলে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন। 

অব্যাহতির সুপারিশ পাওয়া আসামিরা হলেন— তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার এবং সুজন সরকার।

গত ১৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতরে রাত ১১টার দিকে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ১৪ মে সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আখতার মোর্শেদ অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন— আসামি মেহেদী হাসান, রিপন, কবুতর রাব্বি, পাপেল, হৃদয়, রবিন, সোহাগরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। মেহেদী তাদের দলনেতা। তারা মেহেদীর কাছ থেকে মাদকদ্রব্য গাঁজা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাঝখানে মন্দির গেট এলাকায় খুচরা বিক্রি করে। বিক্রি শেষে সবাই মেহেদীর কাছে টাকা জমা দিতো। ঘটনার পূর্বে আসামি রিপন ও রাব্বি, মেহেদীকে ঠিকমত গাঁজা বিক্রির টাকা না দিয়ে বলে তাদের গাঁজা বিক্রির টাকা কিছু মাস্তানরা জোর করে নিয়ে যায়। যার কারণে তারা মেহেদীকে নিয়মিত গাঁজা বিক্রির টাকা দিতে পারে না। এরকম পরিস্থিতি হলে মেহেদী তখন সবাইকে একসঙ্গে প্রতিহত করার জন্য বলে এবং কয়েকজনকে সুইচ গিয়ার (চাকু) ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দেয়। মেহেদী, কবুতর রাব্বি ও রিপনরা যেন উদ্যানে গাঁজা বিক্রি না করে সেজন্য সাম্য ও তার বন্ধুরা নিষেধ করেছিল। এর কারণেই তাদের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়।

তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ১৩ মে রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের কাছে কবুতর রাব্বি প্রতিদিনের মতো গাঁজা বিক্রি করছিল। তখন তার হাতে একটি ইলেকট্রিক ট্রেজারগান ছিল। মেহেদীর ছত্রছায়ায় কবুতর রাব্বি ট্রেজারগান এবং সুইচ গিয়ার নিয়ে সব সময় চলাফেরা করে ও মাদক বিলি করে। কবুতর রাব্বির সঙ্গে পাপেল ও রিপন সব সময় থাকতো। রাতে সাম্য একটি মোটর সাইকেলে তার দুই বন্ধুসহ মুক্ত মঞ্চের দিকে এলে কবুতর রাব্বিকে ইলেকট্রিক ট্রেজারগান হাতে দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলে। রাব্বি তখন মুক্ত মঞ্চ থেকে ৩০/৩৫ গজ দূরে ঘটনাস্থল গোল পুকুর (পুরাতন ফোয়ারা) দিকে দৌড় দেয়। সাম্য তাকে মোটরসাইকেলে করে ধাওয়া করে ধরে ফেলে এবং ইলেকট্রিক ট্রেজারগানটি নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন ট্রেজারগানটি না দিলে সাম্য, রাব্বিকে চড়-থাপ্পর মারে। রাব্বির চিৎকারে পাপেল, মন্দিরের পাশে ক্যান্টিন থেকে রিপন, মেহেদী, সোহাগ, হৃদয় ও রবিনরা ঘটনাস্থলে এগিয়ে এসে সাম্য ও তার বন্ধুদের সঙ্গে তর্কা-তর্কি ও হাতা-হাতিতে জড়িয়ে পড়ে। তাদের ধস্তাধস্তিতে ঘটনাস্থলে আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীর একটি মোটরসাইকেল পড়ে গিয়ে লুকিং গ্লাস ভেঙে যায়। তখন মোটরসাইকেলের একজন (পলাশ সর্দার) তাদের অন্যত্র গিয়ে মারামারি করতে বলে। মেহেদী মোটরসাইকেলের সেই ব্যক্তিকে (পলাশ) চোখে মুখে ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলে। তা দেখে তাদের সঙ্গে থাকা অপর একজন (সম্রাট মল্লিক) এগিয়ে গেলে মেহেদী তার কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে তাকে ডান পায়ের উরুতে ছুরিকাঘাত করে, এতে সে মাটিতে পড়ে যায়। একই সময়ে সাম্যর সঙ্গে হাতা-হাতিতে জড়িত পাপেলকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য মেহেদী ভিকটিম সাম্যর বুকে ঘুষি মারে এবং কবুতর রাব্বির কাছে থাকা সুইচ গিয়ার (চাকু) দিয়ে সে সাম্যর ডান পায়ের রানে চাকু মারলে সেও মাটিতে পড়ে যায়।

সাম্যর বন্ধুদের (রাফি, বায়েজিদ) সঙ্গে মোটরসাইকেলের অপর ব্যক্তির মারামারি চলাকালে সবার চিৎকারে মন্দিরের ভেতরে থাকা লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে এগিয়ে এলে এবং আশ-পাশের আরও লোকজন ঘটনাস্থলের দিকে আসতে থাকলে আসামিরা দক্ষিণ দিকে দৌড়ে পালিয় যায়। মন্দিরের প্রবেশ গেটের কাছে আগে থেকেই রাখা রিপনের আরটিআর মোটরসাইকেলে করে কবুতর রাব্বিকে নিয়ে রিপন মন্দিরের উত্তর পূর্ব পাশের পেছন দিকে মেহেদীর আস্তানায় পালিয়ে যায়।

মামলার অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, সন্দিগ্ধ আসামি সুজন সরকারের সঙ্গে থাকা অপর লোকজন ঘটনাস্থলে এসে সাম্যকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলে সাম্য ও বন্ধুদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে এবং পরে সুজন সরকার যখন মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারে সাম্য মারা গেছে তখন সুজন সরকার তার ফেসবুক লাইভে এসে বলে সাম্যর বন্ধুরা যদি দ্রুত হাসপাতালে পাঠাতো তাহলে এত রক্তক্ষরণে সাম্য মারা যেত না। যা পরে ভাইরাল হয়। কিন্তু মারামারির সময় ঘটনাস্থলে তার উপস্থিতি ছিল না বা আসামিদের সঙ্গে কোনো পূর্ব পরিচিত বা যোগসূত্র ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সুজন সরকার তার গ্রামের বাড়িতে থাকে। ঘটনার দিন তিনি ঢাকাতে ব্যক্তিগত কাজে এসেছিল এবং তার এক আত্মীয়ের বাসায় দুপুরের খাওয়া দাওয়া শেষে সন্ধ্যার পরে তার দুই আত্মীয়সহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে এসেছিল। ঘটনার পরে কালিমন্দিরের গেট দিয়ে বাসায় ফেরার পথে আহতদের ঘটনাস্থলে পড়ে থাকতে দেখে। 

পরের দিন সাম্যর মৃত্যুর সংবাদ জানতে পেরে সে তার ফেসবুকে উল্লেখিত ঘটনা পোস্ট করে। সাম্যর বন্ধু আশরাফুল আলম রাফি ও আসামি সুজন সরকার একই গ্রামে হওয়ায় তাদের মধ্যে পূর্ব শত্রুতার কারণে সাক্ষীরা তাকে ওই ঘটনায় জড়িত বলে সন্দেহ করায় তাকে গ্রেপ্তার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তদন্তকালে এই আসামি মামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

ঘটনাস্থলে পথচারী হিসেবে জব্দকরা মোটরসাইকেলে থাকা তামিম, সম্রাট, পলাশরা, তাদের মোটরসাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মারামারিতে অংশগ্রহণকারী অপরিচিত আসামিদের থামানোর চেষ্টা করলে তারাও আসামিদের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। উপস্থিত সাক্ষীসহ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগত অন্যান্য লোকজন ঘটনাস্থলে এগিয়ে এলে ঘটনায় জড়িত আসামিরা দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে তারা তিনজন আহত অবস্থায় সেই স্থানে অবস্থান করে।

সাম্যর সঙ্গে থাকা তার বন্ধু ও মামলায় সাক্ষী রাফি এবং বায়েজিদ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন তামিম, সম্রাট ও পলাশ তুলনামূলকভাবে কম আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সেই জায়গায় পড়ে থাকে। পরে তারা তাদের মোটরসাইকেলে করে চিকিৎসার জন্য পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে যায় এবং একজন রাজা বাজার এলাকায় যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক নাসিরের ৯৯৯-এ দেওয়া সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে শাহবাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে সাক্ষীদের বক্তব্য শুনে প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারে তৎপর হয়। তখন তামিম, সম্রাট ও পলাশদের শমরিতা হাসপাতাল ও রাজাবাজার এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করে। তদন্তকালে জানা যায়, আসামি মো. তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক (২৮), ঢাকার গুলিস্তান ও ফার্মগেট এলাকায় ফুটপাতে ভ্যানগাড়িতে জামা-কাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। আসামি মো. পলাশ সরদার (৩০) তার গ্রামের বাড়িতে রাজমিস্ত্রির সহযোগী হিসেবে কাজ করে। তারা পরস্পর ঘনিষ্ট বন্ধু হওয়ায় ফুটপাতে ব্যবসা শেষে রাতের বেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রে ঘুরতে আসে এবং ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেল রেখে গল্প করছিল। তদের সঙ্গে ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আসামি মেহেদী ও তার দলের কোনো সদস্যের পূর্ব পরিচয় ছিল না। তাছাড়া সাম্য ও তার বন্ধু বায়েজিদ, রাফিদের সঙ্গেও কোনো পূর্ব পরিচয় ছিল না। এজাহারে বর্ণিত ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মামলার অভিযুক্ত আসামিদের হাত থেকে মৃত সাম্যকে রক্ষা করতে এসে তামিম হাওলাদার মাথায় ইটের আঘাত, সম্রাট পায়ে ছুরির আঘাত এবং পলাশের চোখে জখম হয়। তারা এই মামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত আছে বলে কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়ায় যায়নি। তাই তাদের মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]