বর্তমান সময়ে মোবাইল এসএমএস, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের মাধ্যমে স্বামী যদি স্ত্রীকে ‘তালাক’ লিখে পাঠান, তা কি ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে কার্যকর হবে? তালাক হলে তা কখন কার্যকর হবে?
স্ত্রীকে মুখে ‘তালাক’ বললে যেমন তালাক কার্যকর হয়, স্ত্রী তালাক হয়ে যায়, একইভাবে যে কোনো প্ল্যাটফর্ম তথা- মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ বা ফেসবুকের মাধ্যমে ‘তালাক’ লিখে স্ত্রীর কাছে পাঠালেও তালাক হয়ে যায়।
মেসেজের মাধ্যমে ‘তালাক’ লিখে পাঠালে তা কখন থেকে কার্যকর এটা নির্ভর করবে মেসেজের ভাষা বা তালাক দেওয়ার ধরনের ওপর। এ সম্পর্কে ইসলামিক স্কলারগণের মত হলো-
* যদি মেসেজে লেখা থাকে, ‘যখন বার্তা পৌঁছাবে, তখন থেকে তালাক’ তাহলে মেসেজ পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গে তালাক কার্যকর হবে। স্ত্রী মেসেজটি পড়ুক বা না পড়ুক।
* যদি লেখা থাকে, ‘তুমি তালাক’, তাহলে লেখার সঙ্গে সঙ্গে তালাক কার্যকর হবে’, মেসেজ পৌঁছাক বা না পৌঁছাক।
* মেসেজে তালাক লেখার পর তা পৌঁছানোর আগে যদি এ মেসেজ ডিলিট করা হয়, তখন তালাক কার্যকর হবে না।
তালাক ও ইদ্দত
তালাক শব্দের অর্থ বিচ্ছিন্ন করা বা ত্যাগ করা। ইসলাম ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদকে তালাক বলা হয়। তালাক ইসলামে নিকৃষ্ট কাজ হলেও বৈধ। হাদিসে তালাককে সর্বনিকৃষ্ট বৈধ কাজ বলা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর যদি নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক না থাকে, মিলে মিশে স্বামী স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্যমণ্ডিত জীবন যাপন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়, তখন সমাধান হিসেবে তালাকের কথা চিন্তা করা যায়।
ইসলামের দৃষ্টিতে স্বামী তালাক দিতে পারে। স্বামী যদি মুখে বলে ‘তুমি তালাক’ অথবা ‘তোমাকে তালাক দিলাম’ তাহলে তালাক হয়ে যায়। স্ত্রীকে শুনিয়ে তালাক দিতে হবে কিংবা সাক্ষী রাখতে হবে; তালাকের ক্ষেত্রে এজাতীয় কোনো শর্ত নেই। বরং ফকিহদের ঐকমত্য হল, স্বামী যদি নির্জনে একা বসে তালাক দেয় তাহলেও তা কার্যকর হয়ে যাবে।
* এক বা দুই তালাকের পর ইদ্দতের মাধ্যমে স্বামী চাইলে স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে পারেন। কুরআনে বলা হয়েছে-
اَلطَّلَاقُ مَرَّتٰنِ۪ فَاِمۡسَاكٌۢ بِمَعۡرُوۡفٍ اَوۡ تَسۡرِیۡحٌۢ بِاِحۡسَانٍ ؕ
‘তালাক দুইবার; এরপর সুসম্পর্ক ফিরে এলে ভালোভাবে রাখো অথবা সুন্দরভাবে ছেড়ে দাও।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২২৯)
* তৃতীয় তালাকের পর স্ত্রীকে অন্য কারো কাছে বিয়ে দেওয়া ছাড়া আর ফিরিয়ে নেওয়ার সুযোগ থাকে না। বিষয়টি কুরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে-
فَاِنۡ طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهٗ مِنۡۢ بَعۡدُ حَتّٰی تَنۡكِحَ زَوۡجًا غَیۡرَهٗ ؕ فَاِنۡ طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡهِمَاۤ اَنۡ یَّتَرَاجَعَاۤ اِنۡ ظَنَّاۤ اَنۡ یُّقِیۡمَا حُدُوۡدَ اللّٰهِ ؕ وَ تِلۡكَ حُدُوۡدُ اللّٰهِ یُبَیِّنُهَا لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ
‘অতঃপর যদি সে তাকে (চূড়ান্ত) তালাক দেয়, তবে এরপর সেই পুরুষের পক্ষে সেই স্ত্রী (বিবাহ) হালাল হবে না, যে পর্যন্ত না সে অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করে। অতঃপর যদি সে তাকে তালাক দেয়, তবে উভয়ের পুনরায় মিলিত হওয়াতে গুনাহ নেই, যদি উভয়ের আস্থা জন্মে যে উভয়ে আল্লাহর আইনসমূহ ঠিক রাখতে পারবে। এসব আল্লাহর (আইন) সীমাসমূহ, এগুলোকে সেই লোকদের জন্য তিনি বর্ণনা করেন যারা জ্ঞানী।’ (সুরা বাকারা: আয়াত ২৩০)
সতর্কতা
তাই স্ত্রীর সাথে কোনো ঝগড়া বা মনোমালিন্য হলে রাগের মাথায় ‘তালাক’ শব্দ উচ্চারণ করা বা তালাক দেওয়ার নিয়তে কিছু বলার ব্যাপারে স্বামীদের সাবধান থাকা জরুরি। রাগের মাথায়, ঠাট্টা করে বা তালাক দেওয়ার নিয়ত ছাড়া ‘তালাক’ বললেও তালাক হয়ে যায়। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লা (সা.) বলেছেন-
ثَلاثٌ جِدٌّهُنَّ جِدٌّ، وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: النِّكَاحُ، وَالطَّلَاقُ، وَالرَّجْعَةُ
‘তিন বিষয়ে ঠাট্টাচ্ছলে কিছু বললেও তা যথার্থভাবে বলা কথার মতোই কার্যকর হয়। তাহলো- বিয়ে, তালাক ও তালাক প্রত্যাহার। (আবু দাউদ ২১৯৪, তিরমিজি ১১৮৪, ইবনে মাজাহ ২০৩৯)
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর