চট্টগ্রামের পৃথক স্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া তিনটার দিকে নগরের জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ মাঠে এবং এর আগে দুপুরে যোহরের নামাজের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মাঠে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ মাঠে অনুষ্ঠিত জানাজায় বিএনপির নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠনের নেতবৃন্দ এবং বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তাঁর অবদান জাতি চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশের এলাকার মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডাসহ বিভিন্ন উপাসনালয়ে বেগম খালেদা জিয়ার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি নগর ও জেলার বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্যোগে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আসরের নামাজের পর বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
চট্টগ্রাম নগর ছাড়াও দুপুরে যোহর নামাজের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা নামাজে ইমামতি করেন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব। জানাজার নামাজের আগে বেগম খালেদা জিয়ার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াহ্ইয়া আখতার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক সাইফুল ইসলামসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
বুধবার দুপুর আড়াই টার দিকে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট চত্বরে বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনোয়ারায় দুপুর আড়াইটায় টানেল সংযোগ সড়কে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাউজানে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বক্তব্য রাখেন জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবের সুলতান কাজল, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল হুদা, ফিরোজ আহম্মদ মেম্বার, উত্তর জেলা বিএনপির সম্মানিত সদস্য আবু জাফর চৌধুরী, পৌরসভা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুজ্জামান সোহেল প্রমুখ।
স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া শুধু একটি দলের নেত্রী নন, তিনি গণতন্ত্রের প্রতীক। আজ কেরানীহাটে যে মানুষের ঢল নেমেছে, তা প্রমাণ করে- তিনি এখনো দেশের মানুষের হৃদয়ে শক্ত অবস্থানে আছেন।
জানাজায় অংশ নিতে আসা সাধারণ মানুষদের কেউ কেউ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা কমেনি। রাজনৈতিক বিভাজনের বাইরে গিয়ে তারা একজন জাতীয় নেত্রীর জন্য দোয়ায় শরিক হতে এসেছেন।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে এখনও শোকে ভাসছেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শোক জ্ঞাপন অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে যে শোকের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, চট্টগ্রামেও তা যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় শোক পালনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ সাধারণ ছুটি ছিল। এছাড়া দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি ভবন ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হচ্ছে। এছাড়া দলীয়ভাবেও কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে চট্টগ্রামে।
দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থতায় ভোগা খালেদা জিয়া মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আর্থরাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি লন্ডনে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। কিন্তু গত ২৩ নভেম্বর আবার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে। দেড় মাসের মতো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর মারা যান তিনি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর