• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ সেকেন্ড পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৩৮ বিকাল

সাগরের ঢেউয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে কক্সবাজার সৈকত

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বহুদিন ধরে সাগরের তীব্র ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষয়ে যাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। পর্যটকদের স্বপ্নের এই সৈকতে এখন ভয়, শঙ্কা আর অসহায়ত্বের ছবি স্পষ্ট। লাভনী থেকে নাজীরারটেক- এই ছয় কিলোমিটার এলাকায় প্রকট হয়ে উঠেছে ভয়াবহ ভাঙন। ঢেউয়ের তাণ্ডবে ধসে পড়ছে বিশাল বালিয়াড়ি, উপড়ে যাচ্ছে ঝাউবন, গিলে নিচ্ছে দোকানপাট, ওয়াচ টাওয়ার, এমনকি পুলিশের নিরাপত্তা বক্সও। একসময়ের বিস্তৃত বালুচর অনেকটাই সাগরের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সৈকতের বুকে তৈরি হওয়া গভীর গর্ত আর গুপ্তখাল এখন পর্যটকদের জন্য নতুন আতঙ্ক। বিভিন্ন স্থানে বালুর নিচে ধস নামায় তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক গর্ত, যেখানে পড়ে প্রাণহানি ঘটেছে বহু পর্যটকসহ স্থানীয়দের। কাউকে টেনে নিচে ফেলছে তীব্র স্রোত, আবার কেউ গর্তে পড়ে লণ্ডভণ্ড হচ্ছেন মুহূর্তেই। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিনই ভাঙনের নতুন নতুন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে; বালু হারিয়ে সৈকত দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

এমন পরিস্থিতিতে সৈকত বাঁচাতে বড় ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ‘কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্প’ নামে প্রায় ৬২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকার একটি বিশাল প্রকল্প প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। এতে নাজীরারটেক থেকে লাবণি পয়েন্ট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার উপকূলজুড়ে স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।

সাগরপাড়ে গিয়ে দেখা গেছে, লাবণি থেকে নাজীরারটেক পর্যন্ত পুরো এলাকাজুড়ে এখন ভাঙনের চিহ্ন স্পষ্ট। কয়েক বছর আগেও যেখানে চোখে পড়ত ঘন ঝাউবন আর উঁচু বালিয়াড়ি, এখন সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গুঁড়িগাছ আর ভাঙনের দাগ। পর্যটন পুলিশের বক্স ভেঙে পড়েছে, কয়েকটি ওয়াচ টাওয়ার ঝুঁকিতে। রেস্তোরাঁ, রিসোর্ট আর ছোট ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে- কখন যে সাগরের ঢেউ এসে তাদের ছুঁয়ে যাবে, কেউ জানে না।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মরসুমে ঢেউ আরও উত্তাল হয়। তখন প্রতিদিনই কিছু না কিছু অংশ সাগরে মিশে যাচ্ছে। একসময় যেখানে কয়েকশত ফুট বালুচর ছিল, এখন তা জায়গামতো ৫০-৬০ ফুটে নেমে এসেছে। পর্যটকদের হাঁটার জায়গাও অনেক কমে গেছে। তারা অভিযোগ করেন, কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যাটি দিন দিন আরও ভয়াবহ হচ্ছে।

কক্সবাজার পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, সৈকতের ভাঙন এখন খুবই উদ্বেগজনক। ছয় কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় ‘কক্সবাজার শহর রক্ষা প্রকল্প’ জমা দেওয়া হয়েছে ১৫ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে। প্রকল্পটি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। অনুমোদন আসলেই দ্রুত কাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।

তিনি আরও জানান, এটি শুধু পর্যটনকেন্দ্র নয়- বিমানবাহিনীর ঘাঁটি, ট্যুরিস্ট পুলিশ কার্যালয়, সরকারি মোটেল, ক্রিকেট স্টেডিয়ামসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর ভবিষ্যৎও এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত।

একই কথা বললেন নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, কক্সবাজারের টেকসই উপকূল ব্যবস্থাপনায় এই প্রকল্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনুমোদন পেলে দীর্ঘমেয়াদে এই শহর ও সৈকত সুরক্ষিত হবে। সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই।

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভাঙনের কারণে পর্যটকদের জন্য জায়গা কমে আসছে। বিশেষত সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বালুচরে জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি তৈরি হওয়া গর্ত ও অপ্রত্যাশিত স্রোত বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।

পর্যটক শাহেদুল ইসলাম বলেন, টেকনাফের পরে কক্সবাজার আমাদের দেশের সবচেয়ে প্রাকৃতিক আকর্ষণ। এখন চিন্তা করতে ভয় লাগে- একদিন যদি এই সৈকতই না থাকে?

স্থানীয় হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, পর্যটন আমাদের প্রাণ। সৈকত না থাকলে কক্সবাজারের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই এখনই স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

পর্যটন ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকূলীয় কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে। তাই শুধু স্থায়ী প্রতিরক্ষা নয়, দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনারও প্রয়োজন আছে।

পর্যটন বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এটা কেবল সৈকত রক্ষার প্রকল্প নয়; কক্সবাজার শহরকে ভবিষ্যতের জলবায়ু সংকট থেকে সুরক্ষার উদ্যোগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দেশের উপকূল ব্যবস্থাপনায় এটি হবে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

সৈকত সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী আব্দুল মজিদ বলেন, আগে মনে হতো- সাগর আমাদের কাছে, ভালোই লাগে। এখন রাতে ঢেউয়ের শব্দ শুনলেই ভয় লাগে- কবে যে বাড়ির পাশ ঘেঁষে চলে আসে।

আরেক বাসিন্দা জেসমিন আরা বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে আর সৈকতে যেতে ভয় লাগে। বালুর নিচে হঠাৎ গর্ত- কেউ টেরও পায় না। প্রতিদিনই দুর্ঘটনার খবর শুনি।

কক্সবাজারের সৈকত শুধু বাংলাদেশের নয়- এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক ঐতিহ্য। কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা, দেশের পর্যটন অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক পরিচিতি- সবকিছুই এই সমুদ্রের সঙ্গে জড়িত। সাগরের ঢেউ যদি এই শহরের বুক চিরে ঢুকে পড়ে, তবে ক্ষতি হবে শুধু কক্সবাজার নয়, পুরো দেশের।

তাই সময় এখনই- বেশি দেরি করলে হয়তো পৃথিবীর দীর্ঘতম বালুচরের গল্প থাকবে ইতিহাসের পাতায়, বাস্তবে নয়।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]