অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা লঙ্ঘনের দাবি করে ফিলিপ মরিসের নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনের অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়েছে নারী মৈত্রী। এই সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকারের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়াসের সাথে সাংঘর্ষিক বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। সেই সাথে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী অবিলম্বে পাস করার দাবি জানানো হয়েছে।
বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি এসআরও জারির মাধ্যমে ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম সংশ্লিষ্ট সকল পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপর মে মাসে দেশে ই-সিগারেট/ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ENDS) যন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের অনুমতি প্রদান না করার নির্দেশনা দেয় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। সেই নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বৈশ্বিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনে কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছেন, নিকোটিন পাউচ উৎপাদন বাংলাদেশে সম্পূর্ণ বৈধ ব্যবসা। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় নিষেধাজ্ঞা জারির পরও কীভাবে এটি বৈধ ব্যবসা হয়, তার প্রশ্ন তোলেন সম্মেলনে অংশ নেওয়া বক্তারা।
অনুমোদন বাতিলের দাবি জানিয়ে নারী মৈত্রীর সভাপতি মাসুমা আলম বলেন, বিশ্বের বহু দেশ জনস্বাস্থ্যের হুমকি বিবেচনায় নিকোটিন পাউচ নিষিদ্ধ করেছে। ঠিক এমন সময়ে বেজা বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে দেশে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে। এটি দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। তাই জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই অনুমোদন বাতিল করতে হবে।
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি (FCTC) চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হলেও এখনো তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী পাশ হলে এফসিটিসির মানদণ্ড অনুযায়ী আইনটি শক্তিশালী হবে এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তা হবে এক বড় পদক্ষেপ। তাই আমি বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাশ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি ফাহমিদা আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় দেশে ই-সিগারেট/ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম (ENDS) যন্ত্র ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পণ্য উৎপাদনের কারখানা স্থাপনের অনুমতি প্রদান না করার নির্দেশনা দেওয়ার পরও এই নিকোটিন পাউচ কারখানা স্থাপনের অনুমোদন সরকারের নীতি এবং সংবিধানের ১৮(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের লঙ্ঘন। এটি দেশের তরুণ, নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যকে আরও ঝুঁকির মুখে ফেলবে। তাই বেজা কর্তৃক ফিলিপ মরিসকে দেওয়া নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বী বলেন, সমাজ বদলের অঙ্গীকার নিয়ে ক্ষমতায় আসীন হয়ে নীতিনির্ধারকরা যখন নিকোটিন পাউচের মতো জীবনঘাতি পণ্য উৎপাদনের অনুমোদন দেয় তখন সেটা জনগণের সাথে প্রতারণা করা হয়। এই প্রতারণার দায় নিয়ে অবিলম্বে সরকারকে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক লাবিন রহমান বলেন, আমাদের সন্তানদের ত্যাগে যে বৈষম্যহীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখছি তা ধূলিস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে। নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমোদন দিয়ে সরকার অনেক নিন্দনীয় কাজ করেছে। আমি অবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করার আহ্বান জানাই। পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ও তামাকমুক্ত দেশ গড়তে যেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস করা হয়।
এতে অন্যান্যদের মধ্যে ইয়ুথ ফোরামের সদস্য আশরাফিয়া জান্নাত, মাহমুদুল হাসান হামিম, মাদার্স ফোরামের কো-কনভেনার শাহনাজ বেগম পলিসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন। এছাড়া নারী মৈত্রী টিচার্স ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো, নারী মৈত্রী মাদারস ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকো ও নারী মৈত্রী ইয়ূথ ফোরাম এগেইনস্ট টোব্যাকোর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, তামাকজাত দ্রব্যের মতো নিকোটিন পাউচও শরীরে নিকোটিন গ্রহণের একটি পদ্ধতি। এটি একটি নতুন ধরনের পণ্য যার মাধ্যমে ধূমপান বা তামাক চিবানো ছাড়াই নিকোটিন গ্রহণ করা যায়। বিভিন্ন সুগন্ধি এবং রাসায়নিক মিশিয়ে বাজারজাত করা হয় পণ্যটি। বিশ্বের বহু দেশ জনস্বাস্থ্যের হুমকি বিবেচনায় নিকোটিন পাউচ নিষিদ্ধ করেছে।
সর্বশেষ খবর