ইদানিং পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা প্রায়শই দেখা যায়। তবে এ ঘটনা আসামি ছিনিয়ে নেয়ার নয়, পুলিশকে হুমকির ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানায়।
গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের ছেড়ে না দেয়ায় থানার ওসি ও পুলিশ সদস্যদের গালিগালাজ করে হাড়গোড় ভেঙে দেয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদল ও ইউনিয়ন বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
বুধবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল থানায় এ ঘটনা ঘটে। এরপর পুলিশ নিজে একটি জিডি করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম।
রানীশংকৈল থানা পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার মধ্যরাতে রানীশংকৈল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের চার কর্মী-সমর্থককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে আসে।
গ্রেপ্তারকৃতরা- বাচোর ইউনিয়নের রাজোর এলাকার মৃত বজির উদ্দিনের ছেলে হামিদুর রহমান (৬০), তার ছেলে সারোয়ার নুর লিওন (৩২), ভাউলারবস্তি সম্পদবাড়ি এলাকার মৃত হুসেন আলীর ছেলে খলিলুর রহমান (৫০) ও ধর্মগড় এলাকার এনামুল হকের ছেলে জিয়াউর রহমান (৪২)।
হামিদুর ও সারোয়ারের বাড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের এলাকায়। তাদের গ্রেপ্তার করে গাড়িতে তোলার সময় জাহিদুল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এ দুজনকে ছেড়ে দিতে পুলিশকে চাপ দেন। কিন্তু পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসে। পরে তাদের ছাড়াতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করেন। এরপর তার নেতৃত্বে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ জন নেতাকর্মী ও আসামীদের আত্মীয়-স্বজন থানায় উপস্থিত হয়।
পুলিশ আরও জানায়, পরবর্তীতে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার যুবদলের সভাপতি মোঃ নাজমুল হুদা মিঠু থানায় এসে হামিদুর ও সারোয়ারকে তার আত্মীয় দাবি করে ওসিকে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেন এবং আর্থিক প্রস্তাবও দেন। ওসি তা প্রত্যাখ্যান করে আসামিদের থানা হাজত থেকে গাড়িতে তোলার সময় ওসিসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্যদের অশ্রাব্য গালিগালাজ করে ‘হারগোড় ভেঙে দেওয়ার’ হুমকি দেন তিনি।
অভিযোগের ব্যাপারে নাজমুল হুদা মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “মধ্যে রাতে কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে। তার মধ্যে আমার ব্যবসায়ীক পার্টনার ছিল। তারা আমাকে রাতেই ফোন করে জানালো পুলিশ তাদের আটক করেছে। আমি ওসিকে ফোন দিচ্ছিলাম কিন্তু তাকে পাচ্ছিলাম না। পরে ওসি নিজেই আমাকে বাসায় ডেকে পাঠান। আমি গিয়ে দেখি আগে থেকেই কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। পরে আমি ওসিকে বললাম আপনি যে আমাকে ডাকলেন, বলেন। তখন আমি বললাম যে বাবা-ছেলেকে যে ধরে নিয়ে আসছেন তারা তো কোনো দল করে না। তখন তিনি হুট করে ক্ষেপে গিয়ে বলেন আপনার চ্যালেঞ্জ আমি গ্রহণ করলাম এবং প্রমাণ দেব তারা (আওয়ামী লীগের) কমিটিতে আছে।”
তিনি আরও বলেন, “ওসি আর আমাদের ফোন ধরে না। তাদের ছাড়বে কি ছাড়বে না সেটা তো আমাদের বলতে হবে। আমরা আদালতে গিয়ে জামিনের ব্যবস্থা করব। এদিকে জেলার নেতারাও ফোন দিচ্ছে কিন্তু ওসি কারও ফোন ধরছেন না।”
“তবে আসামি ছিনিয়ে নেয়ার মতো কোন ঘটনা ঘটেনি। আর প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়নি। আমি বলেছি ৪-৫ তারিখ (আগস্ট ২০২৪) যখন থানা জ্বালিয়ে দিতে যায় তখন জেলার এক নেতা আমাকে বলে এটা জাতীয় সম্পদ তোমাকে রক্ষা করতে হবে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে সেদিন থানা রক্ষা করেছিলাম। এ কথা ওনাকে আমি শোনাচ্ছিলাম। হুমকি বা প্রাণনাশের কোন কথাই আমি বলিনি।”— বলেন নাজমুল হুদা মিঠু।
তবে বাচোর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা যুবদলের সদস্য সচীব মো: জাহিদ বলেন, “আমি আগে ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হই। নিশ্চিত না হয়ে আমি কোন বক্তব্য দিতে পারব না। যেহেতু আমি এখনো এ বিষয়ে জানি না।“
রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আরশেদুল হক বলেন, “আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রানীশংকৈল থানায় বিস্ফোরক ও সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা রয়েছে। মধ্যরাতে তাদের পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পরে আদালতের মাধ্যমে আসামিদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের আসামি ধরেছিলাম চারজন। এজন্য আমাকে গালিগালাজ করেন পীরগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সভাপতি মিঠু। তিনি আমাকে ‘দেখে নিব, থানা উড়িয়ে দেব, বাইরে গেলে ঠ্যাং ভেঙে দিব, কীভাবে চাকরি করেন দেখে নিব’ বলে নানানভাবে হুমকি দেন। শুধু আমাকে নয় যে অফিসার আসামিদের ধরেছিল তাকেও গালিগালাজ করেন। বিষয়টি আমি আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে জানিয়েছি।”
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, “থানায় যে ঘটনাটি ঘটেছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। প্রথমত আমরা জিডি করেছি। তাদের হাই কমান্ডের সাথে কথা বলেছি।
তারা আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবস্থা নেওয়ার। এরপরেও আমরা এটা তদন্ত করক। কোর্টের আদেশ নিয়ে যা যা করার আমি সেগুলো করব।”
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর