মানুষের ঘর যদি শান্তি, রহমত ও প্রশান্তিতে ভরে থাকে—তাহলে তা যেন দুনিয়ার এক ছোট জান্নাত। কিন্তু অনেক সময় ঘরে অশান্তি, রাগ, হিংসা, অনৈক্য ও মানসিক অস্থিরতা দেখা যায়। ইসলামি শিক্ষা বলে— এগুলো অনেকাংশে শয়তানের কুপ্রভাব। তবে নবীজি (সা.) আমাদের এমন কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যার মাধ্যমে ঘর থেকে শয়তানের প্রভাব পুরোপুরি দূর হওয়ার পাশাপাশি শয়তান নিজেও পালিয়ে যায়। তাহলো-
ঘরে প্রবেশের সময় পড়ুন দোয়া; রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ، فَذَكَرَ اللَّهَ عِنْدَ دُخُولِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ، قَالَ الشَّيْطَانُ: لَا مَبِيتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ
‘যখন কেউ তার ঘরে প্রবেশ করে ও খাবার গ্রহণের সময় আল্লাহর নাম স্মরণ করে, তখন শয়তান বলে—‘আজ তোমাদের (শয়তানদের) এখানে রাত কাটানোর জায়গা নেই এবং আহারের অংশও নেই।’ (মুসলিম ২০১৮)
তাই ঘরে প্রবেশের সময় এই দোয়াটি পড়া সুন্নত। হাদিসে এসেছে-
بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا، وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا، وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি ওয়ালাঝনা ওয়া বিসমিল্লাহি খরাঝনা ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।’
অর্থ: ‘আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করছি, আল্লাহর নামেই আমরা বের হচ্ছি, আর আমাদের রব আল্লাহর ওপরই আমরা ভরসা করছি।’ (আবু দাউদ ৫০৯৬)
১. নামাজ ও কুরআনের সুরে শয়তান দূরে থাকে
ঘরে নিয়মিত নামাজ আদায় ও আজান দিলে শয়তানের প্রবেশ রোধ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَفِرُّ مِنَ الْأَذَانِ حَتَّى لَا يَسْمَعَ صَوْتَهُ
‘শয়তান আজানের শব্দ শুনে পালিয়ে যায়, যাতে সে তা না শোনে।’ (বুখারি ৬০৮)
২. ঘরকে আল্লাহর স্মরণে জাগ্রত রাখা
যে ঘরে আল্লাহর স্মরণ, কুরআন তিলাওয়াত ও নামাজ কায়েম হয়, সেখানে রহমত নাজিল হয় এবং শয়তান প্রবেশ করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ
‘তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সরা আল-আনফাল: আয়াত ৪৫)
৩. সুরা আল-বাকারা পাঠের বরকত
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
اقْرَؤُوا سُورَةَ الْبَقَرَةِ، فَإِنَّ أَخْذَهَا بَرَكَةٌ، وَتَرْكَهَا حَسْرَةٌ، وَلَا تَسْتَطِيعُهَا الْبَطَلَةُ.
‘সুরা আল-বাকারা পাঠ করো, কেননা এতে রয়েছে বরকত, আর তা পরিত্যাগ করা আফসোসের কারণ। আর জাদুকররা (অথবা শয়তানরা) এর মোকাবিলা করতে পারে না।’ (মুসলিম ৮০৪)
৪. কুরআন তিলাওয়াতে ঘরকে জীবন্ত রাখুন। অন্য এক বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْفِرُ مِنَ الْبَيْتِ الَّذِي تُقْرَأُ فِيهِ سُورَةُ الْبَقَرَةِ
‘যে ঘরে সুরা আল-বাকারা তিলাওয়াত করা হয়, সেই ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়।’ (মুসলিম ৭৮০)
৫. ঘরকে শয়তানমুক্ত রাখার উপায়
> ঘরে প্রতিদিন সূরা আল-বাকারা বা এর অংশবিশেষ তিলাওয়াত করা।
> আজান ও নামাজ প্রতিষ্ঠা করা।
> ঘরে প্রবেশ ও খাবার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা।
> আয়াতুল কুরসি (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ২৫৫) ও শেষ দুই আয়াত (সুরা আল-বাকারা: আয়াত ২৮৫–২৮৬) নিয়মিত পড়া।
শয়তান থেকে রক্ষা পেতে আরও পড়ুন-
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ
উচ্চারণ: আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাক।’
অর্থ: ‘আমি আশ্রয় চাই আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীর মাধ্যমে, তার সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে।’ (মুসলিম ২৭০৮)
পরিশেষে যে ঘরে কুরআনের সুর প্রতিধ্বনিত হয়, নামাজের নিস্তব্ধতা থাকে, আজানের ধ্বনি শোনা যায় এবং আল্লাহর নাম স্মরণ করা হয়— সেই ঘর থেকে শয়তান পালিয়ে যায়, সেখানে বরকত, শান্তি ও রহমতের বর্ষণ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, ‘আল্লাহর নাম নাও—শয়তান দূরে সরে যাবে।’ তাই আসুন, আমাদের প্রতিটি ঘরকে বানিয়ে তুলি ‘শয়তানমুক্ত, আল্লাহমুখী ঘর’।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর