কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ অক্টোবরের হালকা রোদে যেন স্বর্ণালী উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে দুই উপজেলার সুপারির বাগানে।
নরম বাতাসে দুলছে সারি সারি গাছ, আর নিচে জমে উঠছে কাঁচা-খোলার সোনালি বর্ণের ফল। বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি, আর বাজারে লেগেছে রঙিন ব্যস্ততা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উখিয়া- টেকনাফের সুপারি এবার মধ্যপ্রাচ্যেও রপ্তানি হচ্ছে।
উখিয়া কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জালিয়াপালং, রত্নাপালং, হলদিয়াপালং, পালংখালী ও রাজাপালং ইউনিয়নে ৯৫০ হেক্টর জমিতে সুপারির বাগান আছে। এ ছাড়া টেকনাফ উপজেলার ছয় ইউনিয়নে রয়েছে ১,২৬০ হেক্টর জমির বাগান।
দুই উপজেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ৭৮০ মেট্রিক টন- যা এ অঞ্চলের সুপারি চাষে নতুন রেকর্ড তৈরি করছে।
পরিদর্শনে দেখা গেছে, উখিয়ার সোনারপাড়া বাজারে প্রতি সপ্তাহের রবিবার ও বুধবার হাট বসে। হাট ভরে গেছে সুপারির সোনালি স্তুপে- দেখতে যেন একধরনের উৎসব। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারেরা এসে ট্রাকভর্তি সুপারি কিনে নিয়ে যান চট্টগ্রাম-ঢাকা, রংপুর, সিলেট, যশোর, সাতক্ষীরা পর্যন্ত।
পান- সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. সালামত উল্লাহ কালু জানান, প্রতিদিন অন্তত এক কোটি টাকার বেশি সুপারি বিক্রি হয় সোনারপাড়ায়।
সুপারির বড় আরেকটি বাজার টেকনাফের শাপলাপুরে। এছাড়া রুমখা, মরিচ্যা, কোটবাজার, কুতুপালং, বালুখালী, হোয়াইক্যং, হৃত্তা, জাহাজপুরা, সাবরাংসহ ১৫টি বাজারে সুপারির হাট বসে।
পাইকার আলী আকবর সওদাগর জানান, উখিয়া–টেকনাফের সুপারির আলাদা কদর আছে বিদেশে। দুবাই, কাতার, সৌদি আরবে রপ্তানি হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা রপ্তানি করে বিদেশি মুদ্রা আনছেন, এতে দেশের অর্থনীতিও উপকৃত হচ্ছে।
বাগান মালিকেরা বলছেন, ভালো দাম মিলছে। প্রতিপণ (৮০টি) সুপারি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ইনানী গ্রামের কৃষক এখলাছুর রহমান জানান, তার ৪০ শতক বাগানে ৪৫০- ৫৩০ গাছ রয়েছে। এই মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করেছি। এই আয় স্থানীয় পরিবারগুলোর অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আনছে বলেও জানান তিনি।
সোনারপাড়া পান- সুপারি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, ইনানী, নিদানিয়া, মনখালি, মাদার বুনিয়া, সোনারপাড়া, জালিয়াপালং, ভালুকিয়া, তুতুরবিলসহ ৬৪টি গ্রামে বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে দাম ভালো, তাই কৃষকরা খুশি।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, উখিয়া ও টেকনাফে বছরে প্রায় ২০০- ২২০ কোটি টাকার সুপারি ক্রয়- বিক্রয় হয়।
উখিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামানাশিস সরকার বলেন, এবার আবহাওয়া ছিল অনুকূল, সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ও পরিচর্যা- সব মিলিয়ে রেকর্ড ফলন হয়েছে। গত বছরের লক্ষ্য ছাড়িয়ে গেছে উৎপাদন।
টেকনাফ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে রোপণ, সংরক্ষণ ও রোগবালাই ব্যবস্থাপনা নিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলন তাই বেড়েছে।
কৃষকদের ভাষ্য, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুপারির ভর মৌসুম থাকে। এবার শুরু থেকেই ফলন ভালো, আর দামও আছে হাতের নাগালে।
কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ড. বিমল কুমার প্রমাণিক বলেন, সুপারি এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল হয়ে উঠেছে। বাজার ভালো থাকায় মানুষ নতুন করে সুপারির বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর