• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৬ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৩০ দুপুর

কাফনের কাপড় পড়ে উচ্ছেদ অভিযান ঠেকিয়ে দিল শ্রমিক

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুরে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযানে তিনটি ইটভাটা গুড়িয়ে দেওয়ার পর পাশের লামার ফাইতং এলাকায় শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে শত শত শ্রমিক কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে পড়েন। তাদের এই জীবনঝুঁকির প্রতিবাদে থেমে যায় অভিযান। সংশ্লিষ্ট গাড়িবহর; পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠলে প্রশাসন শেষ পর্যন্ত দুই দিনের জন্য অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে এলাকা ত্যাগ করে।

ঘটনাটি শুধু প্রশাসনিক অভিযানের প্রতিরোধ নয়- এটি দুই যুগ ধরে ইটভাটাকে ঘিরে গড়ে ওঠা ২০ হাজার শ্রমজীবী মানুষের পুরো জীবিকা ব্যবস্থার অস্তিত্ব সংকটের প্রকাশ।

পরিবেশ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর অভিযোগ, অনুমোদনবিহীন এসব ইটভাটা বছরের পর বছর পাহাড় কেটে মাটি সংগ্রহ করছে। এতে শুধু পাহাড়ই নয়- পার্শ্ববর্তী বন, জীববৈচিত্র্য ও জলাধারও ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বনভূমি থেকে অবৈধভাবে কাঠ সরবরাহের অভিযোগও রয়েছে। পরিবেশকর্মীদের মতে, এসব ভাটাকে নিয়ন্ত্রণে না আনলে এলাকায় পাহাড়ধস ও পরিবেশগত বিপর্যয়ের ঝুঁকি আরও বাড়বে।

গত রোববার সকালে মানিকপুরে এএমবি–১, এএমবি–২ ও এএমবি–৩ নামের ঝিকঝাক চিমনিযুক্ত তিনটি ইটভাটা ভেঙে দেয় প্রশাসন। অভিযানে নেতৃত্ব দেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পরিচালক জমির উদ্দিন ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর, র‍্যাব, পুলিশ ও আনসারের সদস্যরা।

ইটভাটা মালিকদের দাবি- এই ভাটা তিনটি গুড়িয়ে দেওয়ায় ক্ষতির পরিমাণ ১৫ কোটি টাকার বেশি।

মানিকপুরের অভিযান শেষে একই দল যখন ফাইতং এলাকায় আরও কয়েকটি ইটভাটা উচ্ছেদের প্রস্তুতি নেয়, তখনই বিক্ষোভ শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে শত শত শ্রমিক কাফনের কাপড় পরে সড়কে শুয়ে মৃত্যুকে সামনে রেখে প্রতিরোধ জানান।

সড়কে তাদের অবস্থান, কান্না- হাহাকার ও বিক্ষোভে মিনিটে মিনিটে উত্তেজনা ছড়াতে থাকে। পাহাড়ি সড়ক পুরোপুরি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

আব্দুল মান্নান নামের এক শ্রমিক বলেন, ইটভাটা বন্ধ হলে আমরা কোথায় যাব? আমাদের বাঁচার পথ নেই। তাই আজ কাফন বেঁধেই পথে নামতে হয়েছে।

অবরোধে অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের গাড়িবহর দীর্ঘ সময় আটকা পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে মনে করে প্রশাসন শেষ পর্যন্ত দুই দিনের জন্য অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে।

তাদের মতে, চকরিয়ার মানিকপুরে পাঁচটি এবং ফাইতং ইউনিয়নে ২৫টির বেশি ইটভাটায় প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক দুই যুগ ধরে কাজ করছেন। শুধু শ্রমিকই নন- মাটি সরবরাহকারী, কাঠ–কয়লা ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক, হোটেল কর্মচারীসহ আরও কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ পরোক্ষভাবে এই ভাটাগুলোর ওপর নির্ভরশীল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্রতিনিধিরা।

একজন সিনিয়র শ্রমিক বলেন, শত শত পরিবার ভাটার পাশে ঘর করে থাকে। আমাদের বাচ্চাদের স্কুল, খাওয়া–পরা- সবকিছু এই ভাটার আয়ে চলে।

তার ভাষ্য, চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালীর বড় অংশের নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা মেটায় মানিকপুর–ফাইতংয়ের ইটভাটা। ব্যক্তিগত ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে মসজিদ–মাদ্রাসা, বাজার, সেতু, রাস্তা- সব ধরনের সরকারি- বেসরকারি নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হয় এসব ইট।

মালিকদের অভিযোগ, হঠাৎ ভাটা ধ্বংস করে দিলে স্থানীয় নির্মাণকাজ থমকে যাবে। ইটের দাম লাগামছাড়া হয়ে পড়বে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষই।

পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ঝিকঝাক চিমনি পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, এ ভাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। অন্যদিকে শ্রমিকদের যুক্তি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে রূপান্তরের জন্য মালিকদের সময় ও সহায়তা দেওয়া উচিত, সরাসরি ধ্বংস নয়।

এক শ্রমিক নেতার ভাষ্য, আমরা পরিবেশ নষ্টের পক্ষে নই। কিন্তু একদিনে ২০ হাজার শ্রমিককে রাস্তায় নামিয়ে দিলে তারা বাঁচবে কীভাবে?

স্থানীয় প্রশাসন বলছে, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু শ্রমিকদের স্পষ্ট বার্তা- উচ্ছেদ মানে বেকারত্ব, আর বেকারত্ব মানে মৃত্যু। সেই মৃত্যুকে সামনে রেখে তারা কাফনের কাপড় জড়িয়ে সড়কে শুয়েছেন।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]