বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তিন পার্বত্য জেলার নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি দুর্গম জনপদে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবিক সহায়তায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় এবার পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার গহীন পাহাড়ি অঞ্চল ভূয়াছড়িতে সৃষ্টি হয়েছে এক অনন্য মানবিক দৃষ্টান্ত। বহু বছর ধরে অবহেলিত ও অনুন্নত এই এলাকার মানুষের মুখে এখন হাসির ঝলক। দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে মানুষের জীবনে নানা ক্ষেত্রে আলোর ছোঁয়া এনেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ভূয়াছড়ি এমন একটি এলাকা, যেখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার সুযোগ ছিল প্রায় অনুপস্থিত। পাহাড়ের দুর্গম পথ পেরিয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়া ছিল কঠিন সংগ্রাম। কিন্তু খাগড়াছড়ি রিজিয়নের আওতাধীন বাঘাইহাট জোনের উদ্যোগে এবং রিজিয়ন কমান্ডারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এ চিত্র পাল্টে গেছে। সেনাবাহিনীর "শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়ন" কর্মসূচির আওতায় ভূয়াছড়ি, লালুচোরা, কালুচোরা, মিটিংচোরা, ত্রিপুরা পাড়া, কোজুইতলি পাড়া ও দক্ষিণ ভূয়াছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় ৮৫০ পরিবারকে স্বাবলম্বী ও নিরাপদ জীবনের আওতায় আনা হয়েছে।
সেনাসদস্যরা স্থানীয় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাগ, খাতা, কলম, রাবার ও পেন্সিলসহ শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ করেন। নতুন ব্যাগ হাতে শিশুদের মুখে আনন্দের ঝিলিক। তারা এখন আরও উৎসাহ নিয়ে স্কুলে যায়। পাশাপাশি তরুণদের মাঝে ফুটবল, ব্যাডমিন্টন, ভলিবলসহ ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ করে খেলাধুলায় আগ্রহ বাড়ানো হয়েছে। এতে তরুণরা যেমন মানসিক প্রশান্তি পাচ্ছে, তেমনি শারীরিকভাবে আরও সক্ষম হয়ে উঠছে।
এছাড়া সম্প্রতি সেনাবাহিনীর উদ্যোগে ভূয়াছড়িতে ব্যাপক আকারে পরিচালিত হয় "বিনামূল্যের চিকিৎসা সেবা ও ঔষধ বিতরণ কার্যক্রম"। পাহাড়ি এই এলাকায় কোনো হাসপাতাল না থাকায় সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য মানুষকে আগে বহু দূরে যেতে হতো। এখন সেনাবাহিনীর চিকিৎসা ক্যাম্পেই তারা পাচ্ছে চিকিৎসা ও ঔষধ। নারী-পুরুষ, শিশু ও প্রবীণ সবাই এই সেবায় উপকৃত হচ্ছেন। সেনা চিকিৎসকরা স্থানীয়দের স্বাস্থ্যবিধি ও পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সচেতন করছেন, যা তাদের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন এনেছে।
গত ১০ নভেম্বর ২৪ পদাতিক ডিভিশন এবং এরিয়া কমান্ডার এবং খাগড়াছড়ি রিজিয়নের আওতাধীন বাঘাইহাট জোনের ভূয়াছড়ি এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি দেখেন। পাহাড়ি অঞ্চলের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে জিওসি মহোদয়ের আন্তরিক অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা এসব কার্যক্রমে নতুন গতি সঞ্চার করেছে।
সেনাবাহিনীর এই কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে তারা শুধু দেশের সার্বিক নিরাপত্তা দেয় না, বরং জনগণের কল্যাণ ও সামাজিক রূপান্তরেও নিবেদিত। ভূয়াছড়ির মানুষ এখন বিশ্বাস করে রাষ্ট্র তাদের ভুলে যায়নি। তাদের সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে, খেলাধুলা করছে, নিয়মিত চিকিৎসা পাচ্ছে। দুর্গম ভূয়াছড়ি আজ এক জীবন্ত উদাহরণ- যেখানে রাষ্ট্রের উপস্থিতি মানুষের জীবনে নতুন আলো এনেছে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর