চলতি গৃহযুদ্ধ শুধু রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্য নয়, একই সঙ্গে একটি অর্থনেতিক যুদ্ধ: সুদান দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদ- তেল, সোনা ও কৃষিজমি- দখলের জন্য দুই প্রধান সংঘাতকারী গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই গম্ভীর আকার ধারণ করেছে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা দেখছেন, কার নিয়ন্ত্রণে এই সম্পদগুলো রয়েছে- এবং এর ভবিষ্যৎ সুদানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে আরও গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
কোন গোষ্ঠী কোন সম্পদ দখল করছে?
তেল
সুদানের তেলখনির একটি বড় অংশ পূর্ব এবং উত্তরের দিকে অবস্থিত, বেশ কিছুটা সেনাবাহিনীর (SAF) নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে, কর্নার একটি গুরুত্বপূর্ন দফাদার দিক রয়েছে: খার্তুমকে সংযুক্ত করা রিফাইনারি এবং পাইপলাইনেতেও লড়াই চলছে — যেগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ জয় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংখ্যায়।
আল জাজিরা বলেছে, তেল দখল যুদ্ধকে শুধুমাত্র লড়াই করার অস্ত্র হিসেবে নয়, ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বৈধতা গড়ার একটি হাতিয়ার হিসেবে গৃহযুদ্ধকারী গোষ্ঠীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সোনা
সোনার ক্ষেত্র গুলি দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে এবং অনেকটাই Rapid Support Forces (RSF)-এর নিয়ন্ত্রণে। বিশেষত, RSF-সংযুক্ত কোম্পানি Al-Junaid সোনার খনিজ ও বাণিজ্য পরিচালনায় সক্রিয়: তারা সোনাকে রপ্তানির মাধ্যমে বেশি অর্থ উপার্জন করছে।
উভয় পক্ষই (সেনাবাহিনী ও RSF) সোনাকে তাদের যুদ্ধে অর্থায়নের এক মূল উৎস হিসেবে ব্যবহার করছে, যা সংঘাতকে দীর্ঘস্থায়ী করতেও সহায়তা করছে।
কিছু বিশ্লেষক বলছেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) সোনার অন্যতম গন্তব্য, যেখানে এই ধন সেনাশক্তি ও গৃহযুদ্ধ থেকে লাভবান করছে।
কৃষি ও জমি
সুদান কৃষির দিক থেকেও অত্যন্ত ধনী: বিশেষ করে “গাম অ্যারাবিক” (acacia গাছের রেজিন) উৎপাদনসহ বৃহৎ চাষযোগ্য জমি রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে — অনেক বিখ্যাত কৃষি প্রকল্প, যেমন আল জাজিরাহ ক্ষেতে, উৎপাদন একাধিক মরসুম বন্ধ হয়ে গেছে।
জমি দখল ও কৃষি উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে মিলিটারী গোষ্ঠীর ভূমিকা রয়েছে, যা সাধারণ কৃষকদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে দুর্বল করছে।
অর্থনৈতিক ও রাজনীতিক প্রভাব
সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুধুমাত্র অর্থ নয়; এটি শক্তি ও রাজনৈতিক বৈধতার একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যেসব গোষ্ঠী বড় সম্পদ নিয়ন্ত্রণ করে, তারা তাদের রাজনৈতিক দাবি ও ভবিষ্যৎ ক্ষমতা গড়ার বা মজবুত করার সুযোগ পাচ্ছে।
সোনার মতো দুষ্প্রাপ্য উপাদান আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করে, সংঘর্ষকারী পক্ষগুলো বিদেশি যৌথীদার ও অংশীদারিত্ব গড়ছে — যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিককে উদ্বিগ্ন করেছে।
কৃষি ব্যাহত হলে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়বে, এবং সাধারণ জনসংখ্যার জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে, যারা এই সম্পদ দখল করবে তারা শক্তিশালী অবস্থান থেকে ভবিষ্যতের সুদানের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণে প্রভাব ফেলতে পারবে।
সুদানের গৃহযুদ্ধ এখন শুধু প্রাধান্য এবং রাজনৈতিক অভিপ্রায় নিয়ে লড়াই নয় — এটি একটি আর্থিক যুদ্ধ, যেখানে দখল-সংগ্রাম হচ্ছে দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদগুলোর জন্য। তেল, সোনা ও কৃষি সম্পদ যাদের দখলে রয়েছে, তারা শুধু অর্থ উপার্জন করছে না, বরং ভবিষ্যতের সুদানের জন্য রাজনৈতিক ক্ষমতা ও বৈধতা গড়তে সক্ষম হচ্ছে।
সূত্র-আলজাজিরা।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর