মার্কিন-মধ্যস্থ যুদ্ধবিরতি চলমান থাকা সত্ত্বেও গত এক মাসে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৭ জন ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ (UNICEF)।
শুক্রবার জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইউনিসেফের মুখপাত্র রিকার্ডো পিরেস জানান, নিহতদের মধ্যে খান ইউনুসে বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত এক নবজাতক মেয়েও রয়েছে।
পিরেস বলেন, “এটি একটি সম্মত যুদ্ধবিরতির সময়ে ঘটছে। এই ধারা ভয়াবহ। এগুলো পরিসংখ্যান নয়—প্রতিটি শিশু ছিল একটি জীবন, একটি স্বপ্ন, একটি পরিবার।”
সিরিজ হামলায় একের পর এক শিশু নিহত
বুধবার ও বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের বিস্তৃত হামলায় আরও অন্তত ৮ শিশু নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত করে ইউনিসেফ। গত ১১ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এর পরও ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মধ্যে শিশুদের মৃত্যু বেড়েই চলছে।
যুদ্ধ শুরু পর থেকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়
ইউনিসেফের হিসাবে, অক্টোবর ২০২৩ থেকে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি শিশু নিহত ও আহত হয়েছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, শুধু ২০২৪ সালেই প্রতি মাসে গড়ে ৪৭৫ শিশু আজীবন পঙ্গুত্ববরণ করেছে, যাদের অনেকেই মস্তিষ্কে আঘাত, মারাত্মক দগ্ধ হওয়া ও অঙ্গহানির শিকার। গাজা এখন “আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিশু অঙ্গচ্ছেদীর আবাসস্থল”, বলে মন্তব্য করে সংস্থাটি।
ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ
গাজায় খাদ্য ও মানবিক সাহায্য প্রবেশে ইসরায়েলের কঠোর বাধার কারণে অনাহারে শিশুদের মৃত্যু বেড়েছে। শীতকাল শুরু হওয়ায় দুর্ভোগ আরও চরম হয়েছে।
ইউনিসেফ জানায়, বহু শিশু এখনো খোলা আকাশের নিচে, কাদামাটি ও পানিতে ভেজা অস্থায়ী তাঁবুতে রাত কাটাচ্ছে। পিরেস বলেন, “গাজার শিশুদের জন্য কোথাও নিরাপদ নয়। তাদের দুর্ভোগকে স্বাভাবিক করে তোলা মানবতাবিরোধী।”
হামলার স্বীকারদের বর্ণনায় ভয়াবহতা
সাম্প্রতিক ইসরায়েলি হামলায় আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছে এমএসএফ (Médecins Sans Frontières বা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস)।
তারা জানায়, নারী ও শিশুদের মাথা ও হাত-পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া, গুরুতর ভাঙা হাড় নিয়ে চিকিৎসায় আসতে দেখা গেছে।
গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের রোগী মোহাম্মদ মালাকা বলেন, “আমি দুইটি ক্ষেপণাস্ত্রের শব্দ শুনলাম। জ্ঞান ফেরার পর দেখি বাবা মাটিতে পড়ে আছেন, তিন ভাই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে… চারদিকে কান্না, ধ্বংসস্তূপ আর মৃতদেহ।”
শীতের রাত আরও ভয়াবহ করে তুলছে দুর্ভোগ
ইউনিসেফ জানায়, শীতে শিশুরা কম্বল ছাড়া, ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে রাত কাটাচ্ছে। “তাদের ঘর ধ্বংস হয়ে গেছে, নতুন মৌসুম তাদের জন্য আরও বিপদের কারণ হয়ে উঠছে,” বলেন পিরেস। তিনি আরও বলেন, গাজার শিশুদের জন্য জরুরি সহায়তা অবিলম্বে প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে। “বিশ্ব এই কষ্টকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে পারে না।”
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর