বিএনপির স্থগিত রাখা কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার ২২ কর্মীকে আটক করা হয়েছে। শনিবার রাতে উপজেলা সদরের নান্দিনা এলাকা থেকে তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে এহসানুল হুদার কর্মী-সমর্থকরা একটি নির্বাচনী মিছিল বের করেন। একই সময়ে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালের অনুসারী নেতাকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে অংশগ্রহন শেষে নেতাকর্মীরা ফেরার পথে এহসানুল হুদার কর্মী-সমর্থকদের মিছিলের মুখোমুখি হন।
এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওই মিছিলে হামলা করেন। এতে এহসানুল হুদার কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হন। এর প্রতিবাদে এহসানুল হুদার কর্মীরা শনিবার রাতে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার সময় উপজেলা সদরের নান্দিনা এলাকা থেকে ২২ জনকে সেনা সদস্যরা আটক করেন। পরে তাদেরকে বাজিতপুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
মিছিলে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরজ্জামান মনির বলেন, এসহানুল হুদা বিএনপির কাছ থেকে মনোনয়ন দাবি করলেও তিনি অস্ত্র ও লাঠিসোটাসহ মিছিল করেন আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে। যারা আটক হয়েছে, এর বাইরেও তাঁর অনেক সন্ত্রাসী রয়ে গেছে।
এ বিষয়ে এহসানুল হুদা জানান, তাঁর মিছিলে বিএনপির মিছিল থেকে গুলি করা হয়েছে। রামদা নিয়ে হামলা করা হয়েছে। বেশ কিছু পিকআপ ও মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়েছে। মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হযেছে। তিনি নিজেও আক্রান্ত হয়েছেন। বিষয়টি তারেক রহমানকেও জানানো হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাঁদের মিছিলে কোন আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। যারা আটক হয়েছে, সবাই তাঁর কর্মী কিনা – এ বিষয়ে নিশ্চিত নন তিনি। ঘটনা স্যাবোটাজও হতে পারে বলে দাবি করেন তিনি।
পুলিশ জানায়, শনিবার রাতে মিছিলে হামলা ও কর্মীদের আহত করার ঘটনায় মামলা দায়েরের উদ্দেশ্যে সৈয়দ এহসানুল হুদার ২৫-৩০ জন কর্মী-সমর্থক থানায় যান। ওই সময় সবার হাতেই ছিল দেশীয় অস্ত্র। একই সময় মাদকবিরোধী অভিযানে আটক করা আসামিদের পুলিশে সোপর্দ করতে বাজিতপুর সেনা ক্যাম্পের ইনচার্জসহ সেনা সদস্যরা থানায় অবস্থান করছিলেন। সেনা সদস্যরা থানা থেকে বেরিয়েই সবার হাতে লাঠিসোঁটা দেখে তাদের ঘিরে ফেলেন।
পুলিশের ওই সূত্র আরো জানায়, পরে সবার শরীর তল্লাশি করে সেনা সদস্যরা কথিত ‘আওয়ামী ক্যাডার’ গোলাম সারোয়ার জেহাদের কাছে থাকা ছয় রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি পিস্তল এবং অন্যদের কাছে থাকা একটি রামদা ও ১১টি স্টিলের রড উদ্ধার করেন। এদের মধ্যে গোলাম সারোয়ার জেহাদসহ ২২ জনকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ থানায় সোপর্দ করে সেনাবাহিনী।
এদিকে রবিবার বিকেলে বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা হয়েছে, বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা শনিবার মিছিলের নামে বাজিতপুরে সশস্ত্র মহড়া দিয়েছেন। মহড়ায় অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের ক্যাডারসহ ২২ জনকে সেনা সদস্যরা আটকের ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে, তিনি বিএনপির নামে সন্ত্রাস করছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির লিখিত বক্তব্যে আরো অভিযোগ করেন, প্রার্থী সৈয়দ এহসানুল হুদা কর্মী সমাবেশে বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। তাঁর সশস্ত্র মহড়ায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা অংশ নিয়ে বাজিতপুরে অশান্তি সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগ সম্পর্কে সৈয়দ এহসানুল হুদার বক্তব্য জানতে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বাজিতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুরাদ হোসেন জানান, থানার সামনে অবস্থানরত ২২ জনকে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশি অস্ত্রসহ আটক করে সেনা সদস্যরা থানায় সোপর্দ করেন। এদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর