পথ কুকুর বা বিড়াল হত্যা একটি গুরুতর অপরাধ এবং এটি জনস্বাস্থ্য ও পশু সুরক্ষার দিক থেকে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, এই ধরনের পশু হত্যা নিষ্ঠুরতা এবং মানবিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়, এবং এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় বলে জানিয়েছে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট সাহিদা আক্তার।
তিনি জানান, বাংলাদেশের আইনে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অমানবিক আচরণ রোধ করার জন্য বিশেষ বিধান রয়েছে। ১৯২০ সালে প্রণীত "পশু সুরক্ষা আইন" এর মাধ্যমে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা বা অমানবিক আচরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি যদি জেনেবুঝে বা অবহেলায় কোনো প্রাণীকে আঘাত করে বা হত্যা করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে এবং শাস্তি হতে পারে। বছর ২০১০ সালে, বাংলাদেশ সরকার "পশু সুরক্ষা আইন সংশোধনী ২০১০" প্রণয়ন করে, যাতে পশু হত্যা বা তাদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের জন্য আরও কঠোর শাস্তি নির্ধারণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, পথ কুকুর বা বিড়াল হত্যা হলে সাধারণত অভিযোগ দায়েরের দায়িত্ব স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন বা স্থানীয় পরিষদের ওপর পড়ে। তবে, এটি শুধুমাত্র পুলিশের কাজ নয়; যে কোনো নাগরিক, পশু অধিকার রক্ষা সংস্থা বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই ধরনের ঘটনার বিষয়ে মামলা করতে পারে।
প্রমান সংগ্রহের কথা উল্লেখ এ অ্যাডভোকেট বলেন, যে কোনো হত্যা বা পশু নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ করতে হলে, পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রাথমিক তদন্ত করতে হবে। স্থানীয় মানুষ বা প্রত্যক্ষদর্শীরা যদি এই হত্যার সাক্ষী হন, তারা এই বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এছাড়া, প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠনগুলোরও সক্রিয় ভূমিকা থাকে এবং তারা এগুলোর বিরুদ্ধে মামলা করতে সাহায্য করে।
শাস্তি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, পথ কুকুর বা বিড়াল হত্যা করার শাস্তি বাংলাদেশে নির্দিষ্ট। "পশু সুরক্ষা আইন" অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি জেনেবুঝে বা অমানবিকভাবে কোনো প্রাণীকে আঘাত করে বা হত্যা করে, তাহলে তাকে শাস্তি প্রদান করা হয়।
১)জরিমানা: পশু হত্যার অপরাধে একজন ব্যক্তিকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। তবে, এটি সাধারণত প্রাথমিক শাস্তি হিসেবে নির্ধারিত হয়।
২) কারাদণ্ড: কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষত যদি হত্যাটি অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে সংঘটিত হয়, তাহলে শাস্তি হিসেবে এক মাসের কারাদণ্ড হতে পারে। এই শাস্তি সংশ্লিষ্ট আদালত নির্ধারণ করবে।
৩) অবহেলাজনিত হত্যা: যদি কেউ অবহেলাজনিতভাবে কোনো প্রাণীকে হত্যা করে, যেমন সড়ক দুর্ঘটনার কারণে বা কোন অজ্ঞাত কারণে, তখনও শাস্তি আরোপ করা হতে পারে। তবে, যদি হত্যা প্রমাণিত না হয়, শাস্তি কিছুটা কম হতে পারে।
৪) বিষ প্রয়োগ: যদি কেউ প্রাণীকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে, তাহলে শাস্তি আরো কঠোর হতে পারে। বিষ প্রয়োগ বা নিষিদ্ধ কোনো উপাদান দিয়ে প্রাণী হত্যার জন্য ৩ বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে, এবং জরিমানাও আদায় করা হতে পারে।
আইন প্রয়োগে তিনটি সমস্যার কথা তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে যদিও আইন রয়েছে, তবে পথ কুকুর বা বিড়াল হত্যা সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকে।
১) প্রমাণের অভাব: অনেক সময় পথ কুকুর বা বিড়াল হত্যা প্রমাণ করা কঠিন হয়, কারণ এই ধরনের ঘটনা সাধারণত অপরিচিত জায়গায় ঘটে এবং প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
২) আবেগগত দ্বন্দ্ব: অনেক মানুষের কাছে পথ কুকুর বা বিড়াল হত্যার গুরুত্ব তেমন অনুভূত হয় না, কারণ তারা মনে করেন এসব প্রাণী কেবল "যাযাবর" এবং তাদের কোনো বিশেষ মূল্য নেই। কিন্তু, এটি একটি ভুল ধারণা, এবং এ ধরনের চিন্তা সমাজে পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতার পথ প্রশস্ত করে।
৩) আইন প্রয়োগের দুর্বলতা: অনেক সময় পুলিশের মনোযোগ এবং কার্যকর তদন্তের অভাবের কারণে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।
পথ কুকুর বা বিড়াল হত্যা বন্ধ করতে এবং তাদের প্রতি নিষ্ঠুরতা কমাতে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন উল্লেখ করে সাহিদা আক্তার বলেন,
সচেতনতা বৃদ্ধি: মানুষের মধ্যে পশুদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা তৈরি করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে, পশু হত্যা শুধু একটি অপরাধ নয়, বরং এটি মানবিকতারও প্রশ্ন।
২) আইনের প্রয়োগ আরও কঠোর করা: আইন প্রয়োগে গাফিলতি দূর করতে পুলিশের প্রশিক্ষণ এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যায়।
৩) প্রাণী অধিকার রক্ষা সংগঠনের সহায়তা: প্রাণী অধিকার রক্ষা সংস্থাগুলোর তদারকি এবং কাজকে আরও সক্রিয় ও জনপ্রিয় করতে হবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর