সমাজের অবহেলিত ও পরিশ্রমী এক শ্রেণির মানুষের জীবনমান উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করল আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন। শুক্রবার প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হলো রিকশাচালকদের নিয়ে অর্ধদিবসব্যাপী জীবনমান উন্নয়ন কর্মশালা, যেখানে উদ্বোধনী দিনেই দেখা গেল অভূতপূর্ব উৎসাহ, ভিড় ও আবেগঘন পরিবেশ।
রিকশাচালকদের দিয়ে উদ্বোধন—এক ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মতে, সমাজে নীরবে ও নিষ্ঠার সঙ্গে যারা কর্মজীবন চালিয়ে যান অথচ অবদানের তুলনায় কম মূল্যায়িত—তাদের মধ্য থেকেই কর্মশালার যাত্রা শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য প্রথম পর্যায়ে বেছে নেওয়া হয়েছে রিকশাচালক ভাইদের।
প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, সমাজের নানা স্তরের মানুষের—ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ছাত্র ও সাধারণ শ্রমজীবী—সকলের জীবনমান উন্নয়নে ধাপে ধাপে ধারাবাহিক কর্মশালা আয়োজন করা।
অভূতপূর্ব অংশগ্রহণ
আয়োজকদের তথ্যমতে, ঘোষণার পরপরই আগ্রহীদের সাড়া পেয়ে ১,২০০-র বেশি রিকশাচালক রেজিস্ট্রেশন করেন। তবে আসন সংকটের কারণে প্রথম ধাপের কর্মশালায় অংশ নিতে পারেন মাত্র ৫০০ জন। অতিরিক্ত আবেদনকারীদের জন্য পরবর্তীতে আলাদা কর্মশালার আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
সারাদিনজুড়ে সমৃদ্ধ সেশন
কর্মশালায় রিকশাচালকদের জন্য ছিল বাস্তবসম্মত ও প্রয়োজনীয় নানা বিষয়ের ওপর সেশন—
-
পরিচ্ছন্ন ও সম্মানজনক জীবনযাপনের মানসিক প্রস্তুতি -
ট্রাফিক আইন, সড়ক নিরাপত্তা ও দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায় -
স্বাস্থ্যসচেতনতা, পরিচ্ছন্নতা ও প্রাথমিক চিকিৎসা -
সুন্দর আচরণ, গ্রাহকের সঙ্গে ব্যবহার এবং সামাজিক শিষ্টাচার -
পারিবারিক দায়িত্ব—স্ত্রী-সন্তানের প্রতি করণীয় -
কম আয়ে সঞ্চয়, স্বাবলম্বী হওয়ার পথ এবং ঋণমুক্ত জীবনযাপনের নির্দেশনা -
প্রয়োজনীয় দীনি জ্ঞান ও নৈতিক জীবনের দিকনির্দেশনা
প্রতিটি বিষয়ে উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ, যারা রিকশাচালকদের বাস্তব অভিজ্ঞতা, দৈনন্দিন সমস্যা ও সমাধানের পথ নিয়ে মুক্ত আলোচনা করেন।
জুমার নামাজ—এক আবেগঘন মুহূর্ত
কর্মশালা শেষে রিকশাচালকদের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করেন ফাউন্ডেশনের দায়িত্বশীল সদস্যরা। আয়োজকদের ভাষায়, প্রায় ২৫ বছর ধরে জুমা পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকলেও রিকশাচালকদের নিয়ে এই আয়োজন ছিল এক বিশেষ ও স্মরণীয় অনুভূতি।
পুরস্কার ও পরবর্তী পরিকল্পনা
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের আগামী এক মাস বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। প্রশিক্ষণের বিষয়গুলোর ওপর যাদের পারফরম্যান্স সর্বোত্তম হবে, তাদের মধ্য থেকে একজন রিকশাচালককে উমরা সুযোগ দেওয়া হবে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজনকে প্রদান করা হবে বিশেষ উপহার।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন জানায়, রিকশাচালকদের মাধ্যমে এই কর্মসূচির সূচনা হলেও এটি কেবল শুরু। ধীরে ধীরে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা কর্মশালা চালিয়ে যেতে চায় প্রতিষ্ঠানটি।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর