দুর্বৃত্তের গুলিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিহত জুলাইযোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র প্রয়াত শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে হাদি চত্বরে শহীদী শপথ গ্রহণ করবে ইনকিলাব মঞ্চ।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ইনকিলাব মঞ্চের ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের।
তিনি বলেন, ‘১ মাসের মধ্যে হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে আর নির্বাচন-নির্বাচনের সময় হবে। হাদিকে হত্যার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের একটি ষড়যন্ত্র করা হয়েছেন। হাদি ভাইকে গুলি করার ১১ দিন হলো অথচ এখন পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। যদি হাদি ভাইকে হত্যার বিচার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে না করা হয়, বাংলাদেশে যদি কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, এর দায় সরকারকে নিতে হবে। শুধু ড. ইউনূস সরকার না, এর সঙ্গে অনেকেই সরকারে রয়েছেন। ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে আগামীকাল মঙ্গলবার শহিদি শপথ ঘোষণা করছি। মঙ্গলবার বিকেল ৩টা শহীদ হাদি চত্বরে সকলে সমাবেত হবো এবং হাদি ভাই স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব লড়াই ও জুলাই অভ্যুত্থান পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে যারা শহীদ হয়েছেন, আমরা হাদি ভাইকে সামনে রেখে দেশের জনগণকে সামনে রেখে শহীদী শপথ কর্মসূচি পালন করব।’
এর আগে ইনকিলাব মঞ্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখপাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদের (ডাকসু) মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা সরকারকে সহয়তা করে যাচ্ছি, যেন কোন বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। ইন্টেলিজেন্সের কাছে সব তথ্য ছিল কিন্তু তারপরেও কেন হাদি ভাইকে হত্যা করা হলো। আমরা এতোটা সুশীল না; আমাদের কোন ঠেকা নাই; আপনাদের ক্ষমতাই বসিয়ে রাখার যদি ভাই হত্যার বিচারই না পাই। ১ মাসের মধ্যে হাদি হত্যার বিচার করতে হবে, অবশ্যই সেটি নির্বাচনের আগে। এখন থেকে আমাদের লাগাতার কর্মসূচি থাকবে। এই হত্যাকণ্ডে পুরো সিন্ডিকেটকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা আমার ভাইয়ের বিচার নিশ্চিত হওয়ার পরই রাজপথ ছাড়ব।’
ট্রাইবুনাল করে হাদি হত্যার বিচারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাবের মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত অভিনেতা ও মডেল আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কোন নির্বাচন হবে না, আগে আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে তারপর নির্বাচন হবে। সরকার যদি নির্বাচনের তারিখ ঠিক রাখতে চান, অতিদ্রুত ট্রাইবুনাল গঠন করে হাদি হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করুন।’
বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না জানিয়ে ওসমান হাদির বড় ভাই ওমর হাদি বলেন, ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি। আমরা সরকারকে ১টা কথা বলতে চাই, হাদির জানাযায় লক্ষ লক্ষ মানুষ জানাযায় অংশ নিয়েছিল। এটি কোন পরিকল্পিত বিষয় ছিল৷ হাদির খুনিরা যেই দেশেই থাকুক, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের আমাদের সামনে হাজির করতে হবে। খুনিদের হাজির করা না হলে, আমরা ঘরে ফিরব না। আমরা শহীদ ওসমান হাদির উত্তরসুরী।’
এর আগে বেলা ৩টা ২০ মিনিটে শাহবাগের শহিদ হাদী চত্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত ওই মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভ বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা অংশ। এসময় বিক্ষুব্ধরা বিচারের দাবিতে ‘জ্বালো রে, জ্বালো রে, আগুন জ্বালো’, ‘দিল্লির দালারেরা, আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, সুখে-দুখে কথা কবো’, ‘আমরা ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘দিল্লি না ঢাকা-ঢাকা, ঢাকা’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এর আগে ইনকিলাব মঞ্চের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে ৩ দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো- দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে হবে। তদন্তের জন্য এফবিআই অথবা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মতো পেশাদারি এবং নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা সংস্থাকে যুক্ত করতে হবে; সিভিল-মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী এবং আইন উপদেষ্টাকে জনগণের কাছে তাদের অপারগতার কারণ প্রকাশ করে এই খুনের সকল দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর শরিফ ওসমান হাদিকে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা গুলি করে। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর তাকেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুর নেয়া হয়। তিনদিনের মাথায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ইনকিলাব মঞ্চের এই মুখপাত্র।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর