বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে আরও শক্তিশালি করতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫' সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদ অনুমোদন করেছে।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং দেশের কিশোর ও তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে রক্ষায় এ ধরণের পদক্ষেপকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’অনুমোদন করায় অন্তবর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অফ সোসাইটি (ডাস্)।
গণপরিবহন ও পাবলিক প্লেসকে ধূমপানমুক্ত করতে দীর্ঘদিন ধরে মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে ডেভলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অফ অফ সোসাইটি-ডাস্। তারা মনে করে, ২০১৩ সালের পর দীর্ঘ এক যুগ পরে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন একটি সময়োপযোগী ও সাহসী সিদ্ধান্ত। বিশেষ করে ই-সিগারেট, হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্টসহ নতুন তামাক ও নিকোটিন পণ্যের উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব জনস্বাস্থ্য রক্ষায় একটি যুগান্তকারী অগ্রগতি।
ডাস্ টীমলীড আমিনুল ইসলাম বকুল মনে করেন, নারী, শিশু, বয়স্ক এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থ ব্যক্তি সহ লক্ষ লক্ষ যাত্রী প্রতিদিন বাস টার্মিনাল, আন্তঃনগর বাস, স্থানীয় বাস, নদীবন্দর এবং যাত্রীবাহী জাহাজের মতো ঘনবসতিপূর্ণ পরিবেশে যাতায়াত করেন এবং পরোক্ষ ধূমপানের সংস্পর্শে আসেন। এই আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলে জনসাধারণকে প্রত্যক্ষ ধূমপানের পাশাপাশি পরোক্ষ ধূমপানের সংস্পর্শ কমাতে সাহায্য করবে, পাবলিক প্লেসে তামাক ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করবে এবং তামাকজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার হ্রাস করার বৃহত্তর জাতীয় লক্ষ্যগুলিকে শক্তিশালী করবে।
অনুমোদিত অধ্যাদেশের ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে—
> সব পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানসহ সকল প্রকার তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ,
> তামাকজাত দ্রব্যের সকল প্রকার বিজ্ঞাপন, প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা,
তামাক পণ্যের মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার পরিসর ৭৫ শতাংশে উন্নীত করা,
> নিকোটিন পাউচসহ নতুন পণ্যকে তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞার আওতায় আনা।
ডাস্ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ এবং তামাক পণ্য বিক্রেতাদের লাইসেন্সিং/নিবন্ধন ব্যবস্থা—এই দুটি তামাক নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পন্থা হওয়া সত্ত্বেও অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। খুচরা বিক্রয়ের কারণে শিশু- কিশোর ও স্বল্প আয়ের মানুষ তামাক পণ্য সহজেই হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছে, যা তামাক নিয়ন্ত্রণের মূল উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ডাস্ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, তামাক কোম্পানির কর ফাঁকি, অবৈধ বাণিজ্য এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে তামাক পণ্য বিক্রি রোধে বিক্রেতা নিবন্ধন ও খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত বিধান অবিলম্বে সংযুক্ত বাস্তবায়ন করা জরুরি। সরকার দ্রুত এ বিষয়ে পরিপূরক আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবে বলে সংস্থাটি আশা প্রকাশ করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ১ লক্ষ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করে এবং তামাক ব্যবহারের কারণে দেশের অর্থনীতিতে স্বাস্থ্য ব্যয়, পরিবেশ ক্ষতি ও উৎপাদনশীলতা হ্রাসসহ অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণ ৮৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে উল্লেখিত অধ্যাদেশটি শক্তিশালী ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ডেভলপমেন্ট এ্যাকটিভিটিস অফ সোসাইটি (ডাস্) সরকারের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতৃত্ব, গণমাধ্যম, সিভিল সোসাইটি এবং তরুণ সমাজকে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর