বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গভীর শোকের প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমসহ বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো গুরুত্ব সহকারে তার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি (NDTV) এক প্রতিবেদনে জানায়, ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জনগণের সরাসরি ভোটে ক্ষমতায় আসার মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া কার্যত তার প্রধানমন্ত্রীত্বের অধ্যায় শুরু করেন। তার নেতৃত্বেই বাংলাদেশে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তিত হয় এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়।
এনডিটিভি আরও জানায়, বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ কিডনি, ফুসফুস, হৃদ্যন্ত্র ও চোখের নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। তার চিকিৎসায় বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা যুক্ত ছিলেন।
তার মৃত্যুর খবর আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোও প্রধান শিরোনামে প্রকাশ করেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি, আল জাজিরা, রয়টার্স, সিএনএন, দ্য গার্ডিয়ানসহ একাধিক আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে শীর্ষ সংবাদ হিসেবে উঠে এসেছে বেগম খালেদা জিয়ার ইন্তেকালের খবর।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ৮০ বছর বয়সে মারা গেছেন। প্রতিবেদনে বিএনপির ফেসবুক ঘোষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, “আমাদের প্রিয় নেত্রী আর আমাদের মধ্যে নেই। তিনি মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।”
বিবিসি আরও উল্লেখ করে, সোমবার রাতে চিকিৎসকরা তার অবস্থাকে ‘অত্যন্ত সংকটজনক’ বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন, তবে বয়সজনিত জটিলতা ও শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে একাধিক চিকিৎসা একসঙ্গে দেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
আল জাজিরা জানায়, দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ঢাকার একটি হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়েছে বলে তার দল ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, তার শেষ দিনগুলোতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়ে তার জন্য দোয়া করার কথা বলেন এবং তাকে দেশের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন।
আল জাজিরা আরও জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ১৭ বছর নির্বাসনে থাকার পর সম্প্রতি দেশে ফেরেন এবং দেশে ফেরার সময় বিপুলসংখ্যক সমর্থক তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, ২০০৬ সালের পর থেকে ক্ষমতার বাইরে থাকা সত্ত্বেও এবং দীর্ঘ সময় কারাবন্দি বা গৃহবন্দি অবস্থায় কাটালেও বেগম খালেদা জিয়া ও তার দল বিএনপি দেশের রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য জনসমর্থন ধরে রেখেছিল। রয়টার্স জানায়, আসন্ন ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে এগিয়ে থাকা দল হিসেবে দেখা হচ্ছিল এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছিল।
বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এসব প্রতিবেদনে তার রাজনৈতিক ভূমিকা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অবদান এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে তার অবস্থান বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর