অডিটের ফাঁদে কয়েক হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০১৬, ০৩:০৮ পিএম

নিউজ ডেস্ক: মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে অডিট বা নিরীক্ষার ফাঁদে আটকে আছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। ইঁদুর-বিড়াল খেলার মতো সময় পার হয়ে যাচ্ছে কিন্তু অডিট শেষ হচ্ছে না। প্রথম দফা অডিটে কেবল গ্রামীণফোনের রাজস্ব ফাঁকি ধরা পড়েছিল তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা। উচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই অডিট প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে যায়। নতুন অডিটও শুরু হয়েছে এক বছরের বেশি সময় আগে। সময় যাচ্ছে, অডিট আর শেষ হচ্ছে না।

আগের বার অডিট ফার্মকে অফিসেই ঢুকতে দেয়নি বাংলালিংক। পরে বিটিআরসি বাংলালিংকের নাম অডিটের তালিকা থেকে ‘বাদ’ই দিয়ে দিয়েছে। নতুন করে নাম ঢুকিয়েছে রবির। গত মার্চে রবির অডিট শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট সময় পার হলেও শেষ হয়নি অডিট। নতুন করে অডিট ফার্মগুলোকে সময় বাড়িয়ে দিয়েছে বিটিআরসি।

২০১১ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) মোবাইল ফোন সেবাদানকারী কোম্পানিগুলোর অডিটের উদ্যোগ নেয়। ওই সময় দুইটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেয় বিটিআরসি। তখন অডিট ফার্মকে দুই দফা অফিসে ঢুকতেই দেয়নি বাংলালিংক। যদিও গ্রামীণফোনের অডিট শেষ করে ফার্মটি। এতে গ্রামীণফোন তিন হাজার ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে বলে ধরা পড়ে। পরে অবশ্য অডিটের ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন তুলে আদালতে যায় গ্রামীণফোন। তখন হাইকোর্ট থেকে ওই অডিটের উপর স্থিতাবস্থা দেয়া হয়। তখন থেকেই আন্তর্জাতিক কোম্পানি দিয়েই অডিটের দাবি জানিয়ে আসে মোবাইল অপারেটররা। পরে তাদের দাবি অনুযায়ী বিদেশি ফার্ম যুক্ত করা হয়।

নতুন করে অডিটের উদ্যোগে বাংলালিংকে বাদ দিয়ে গ্রামীণফোনের সঙ্গে রবির নাম যুক্ত করে বিটিআরসি। যদিও বিটিআরসি বলছে, সব প্রতিষ্ঠানেরই অডিট হবে। কোনোটা আগে, কোনোটা পরে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু গ্রামীণফোনের ফাঁকি ধরা পড়েছিল তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। এবারের অডিটে সেটা কিছুটা কম-বেশি হতে পারে; কিন্তু ফাঁকি তারা দিয়েছে এটা মোটামুটি নিশ্চিত। অন্য অপারেটরগুলোর অডিট শেষ করা গেলে সরকার রাজস্ব হিসেবে অপারেটরদের ফাঁকি দেয়া কয়েক হাজার কোটি টাকা পেত; কিন্তু অডিটগুলো তো শেষ করা যাচ্ছে না। ২০১১ সাল থেকে এই আলোচনা শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালের শেষে এসেও সমাধান হলো না।

অডিট শেষ না হলেও তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানিকে ইতিমধ্যে এক কোটি টাকা পরিশোধও করেছে বিটিআরসি। তাদের সঙ্গে সাড়ে ৮ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে। জানা গেছে, এর আগে ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে ৪৫ কোটি টাকা অডিটের জন্য বরাদ্দ চেয়েছিল বিটিআরসি। সেই টাকা খরচের জন্য সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে অনুমতিও দেয়া হয়েছিল; কিন্তু বিটিআরসি অডিটের কাজ শেষ করতে না পারায় খরচ করা যায়নি সেই ৪৫ কোটি টাকা। গতকাল সোমবার আলাপকালে বিটিআরসির একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানির অডিটের সক্ষমতা নিয়েই আমাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তাই তাদের অগ্রগতি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’

গত বছরের অক্টোবরে ভারতীয় সি অ্যান্ড কে অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানি গ্রামীণফোনের অডিট শুরু করে। তাদের সময় বেঁধে দেয়া ছিল ৬ মাস। গত মার্চে তাদের অডিট শেষ হওয়ার কথা; কিন্তু নানা অজুহাত তুলে অডিট ফার্মকে সহযোগিতাই করেনি গ্রামীণফোন। সর্বশেষ মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে গত ১৯ জুলাই থেকে গ্রামীণফোনের অডিটের কাজ শুরু করে ফার্মটি। এর জন্য মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসিকে নানা শর্ত জুড়ে দিয়েছে গ্রামীণফোন। সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে- নতুন ফার্মের অডিট করা রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না গ্রামীণফোন। তাদের ফাঁকি দেয়া টাকার পরিমাণ এই অডিট ফার্ম যা বলবে সেটাই মেনে নেবে দুই পক্ষ।

তোহা খান জামান অ্যান্ড কোম্পানির প্রধান নির্বাহী মো. নাসের বলেন, ‘অডিটের দুটো দিক। একটা বিটিআরসির এবং অন্যটা গ্রামীণফোনের। বিটিআরসি দিকের কাজটি আমরা শেষ করে ৬টি অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিয়েছি। নানা জটিলতায় গ্রামীণফোনের দিকের কাজ শুরু করতে অনেক দেরি হয়েছে। গত ১৯ জুলাই থেকে আমরা কাজ শুরু করেছি। দুই-এক দিনের মধ্যেই প্রথম অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দেব। কয়েকদিন পর আমরা একটা প্রেজেন্টেশনও দেব। নতুন করে বিটিআরসি সময় বাড়িয়েছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’ সব মিলিয়ে বিটিআরসি এই অডিট ফার্মকে দুই দফা সময় বাড়িয়েছে।

একই সময়ে রবির অডিটও শুরু করার কথা ছিল। নানা অজুহাতে তারাও কাজ শুরু করতে দেয়নি মসিহ মহিদ হক অ্যান্ড কোম্পানি নামের প্রতিষ্ঠানটিকে। সর্বশেষ গত মার্চে তারা কাজ শুরু করেছে। তাদের সময়ও দুই দফা বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৭ মার্চের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়ার কথা। সর্বশেষ দেয়া সময়ের মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া নিয়ে সংশয় সংশ্লিষ্টদের। আর বাংলালিংক তো আপাতত ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। কবে নাগাদ তাদের অডিট শুরু হবে সেটা জানে না খোদ বিটিআরসির কেউই। হঠাত্ করেই বাংলালিংককে বাদ দিয়ে রবির অডিট কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেন, এই দুইটি প্রতিষ্ঠান (গ্রামীণফোন, রবি) যেহেতু লাভজনক তাই আগে তাদের অডিট করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সবারটাই করা হবে।সূত্র: ইত্তেফাক

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: